জনতার আলো, স্পোর্টস রিপোর্টার: ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জিতে ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে মাঠে নেমে প্রথম জয় পেতে টাইগারদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ পর্যন্ত। আজ থেকে ঠিক ১৯ বছর আগে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে তুলনামূলক দুর্বল দল স্কটল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে প্রথম জয় পেয়েছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দল।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যথাক্রমে ৬ এবং ৭ উইকেটে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। অনেক প্রতীক্ষার পর তৃতীয় ম্যাচে আসে কাঙ্ক্ষিত জয়। বাংলাদেশ দলের করা ১৮৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে ১৬২ রানেই থেমে যায় স্কটিশরা। মাত্র তৃতীয় ম্যাচেই টাইগাররা পেয়ে যায় বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজেদের প্রথম জয়।
এডিনবার্গের গ্রেঞ্জ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে তখনো পর্যন্ত নিজেদের ব্যর্থতার ধারা চলমান রেখে স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৬ রান জমা হতেই সাজঘরে ফেরত আসেন খালেদ মাসুদ, মেহরাব হোসেন, আমিনুল ইসলাম, ফারুক হোসেন এবং আকরাম খান। আকরাম, আমিনুল এবং মাসুদ রানের খাতা খুলতেই ব্যর্থ হন।
ষষ্ঠ উইকেটে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়েন তখনকার বাংলাদেশ দলের সেরা স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং অফস্পিনার নাইমুর রহমান দুর্জয়। তাদের ৬৯ রানের জুটিতে একশো’র কাছাকাছি পৌঁছায় টাইগারদের স্কোর। ৫৮ বলে ৩৬ রান করে সাজঘরে ফিরে যান নাইমুর। ইনিংসের বাকি পথ লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কাটিয়ে দেন নান্নু।
নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরিতে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন নান্নু। ১১৬ বলের ইনিংসে ৬টি চার মারেন তিনি। এছাড়া নিচের দিকের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এনামুল হক মণির ব্যাট থেকে আসে ১৯ রানের ইনিংস। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
এর আগের ম্যাচে ১৮৩ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেট তুলে নেয়ায়, এই ম্যাচে ১৮৫ রান করেও আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ দল। যার প্রতিফলন ঘটে স্কটিশরা ব্যাট হাতে নামতেই। মাত্র ৮ রানের মধ্যেই স্কটল্যান্ডের টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান হাসিবুল হোসেন এবং মঞ্জুরুল ইসলাম।
খানিক প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন স্কটিশ অধিনায়ক জর্জ স্যালমন্ড এবং ইয়ান স্টেঞ্জার। তবে এই জুটি ভয়ানক হয়ে ওঠার আগেই ব্রেকথ্রু আনেন মঞ্জুরুল। সাথে ব্যাট হাতে অপরাজিত ফিফটি করা নান্নু বল হাতেও জ্বলে উঠলে দলীয় ৫০ এর আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে স্কটল্যান্ড। এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন গ্যাভন হ্যামিল্টন।
গ্যাভনের ফিফটি এবং অ্যালেক ডেভিসের কার্যকরী ইনিংসে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে স্কটল্যান্ড। ঠিক তখনই রানআউটে গ্যাভনকে সাজঘরে ফেরত পাঠান মঞ্জুরুল। ৪ চার এবং ১ ছক্কার মারে ৬৩ রান করেন গ্যাভন। ডেভিসের ব্যাট থেকে আসে ৩২ রানের ইনিংস।
৪৭তম ওভারে বল করতে এসে দুই বলের মধ্যে দুই উইকেট নিয়ে স্কটিশদের ইনিংসে মোড়ক লাগিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল। ২২ বল বাকি থাকতেই ১৬৩ রানে অলআউট হয়ে যায় স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন মঞ্জুরুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ এবং হাসিবুল হোসেন।
স্কটিশদের হারিয়ে বিশ্বকাপের আসরে প্রথম জয় পাওয়ার পর সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দেশ পাকিস্তানকেও হারায় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের স্মৃতি হাতড়ালে সবার আগে মনে পড়ে সেই পাকিস্তান বধের কথাই। কিন্তু স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে পাওয়া বিশ্বকাপে প্রথম জয়টিও কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ২৪ মে ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.