জনতার আলো, নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির প্রতিবাদে রাজধানীতে এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে আটক করেছে র্যাবের একটি দল।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে র্যাবের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুইজন আহত হন। তারা ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী।
বুধবার বিকাল চারটার দিকে ইমরানকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান।
ইমরানকে আটক করা র্যাব-৩ এর অধিনায়ক এমরানুল হাসান জানান, অবৈধভাবে জনসমাবেশ করার অভিযোগে তাকে আটক করেছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানিতে বিচারবহির্ভুত হত্যা দাবি করে এর প্রতিবাদে শাহবাগে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল গণজানগণ মঞ্চ।
গত ৪ মে থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া সাঁড়াশি অভিযানে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নিহত সবাই মাদকের কারবারে জড়িত।
প্রতিটি ঘটনার বর্ণনা গত ১৪ বছর ধরে চলে আসা ক্রসফায়ার বা বন্দুকযু্দ্ধের দাবির সঙ্গে হুবহু একই রকম।
সন্দেহভাজনকে ধরতে গেলে তিনি ও তার সহযোগী অথবা সন্দেহভাজনকে নিয়ে অভিযানে গেলে সহযোগীরা গুলি করেছে। পাল্টা গুলিতে নিহত হয়েছেন সন্দেহভাজন।
২০০৪ সাল থেকে দেশে ব্যাপকভাবে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে এই ১৪ বছরে প্রায় তিন হাজার মানুষ এভাবে নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে বিএনপি সরকারের আমলের তিন বছরে ৯৫১ জন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই বছরে ৩৫৫ জন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নয় বছরে চলতি মে মাস পর্যন্ত ১৬৮৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
বিএনপি সরকারে থাকাকালে আওয়ামী লীগ এই প্রক্রিয়ায় অপরাধী দমনের যেমন বিরোধিতা করেছে, তেমনি বর্তমান সরকারের আমলে এই কৌশলের বিরোধী বিএনপি। আবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা থাকাকালেও এভাবে নিহত হয়েছেন সন্দেহভাজন অপরাধীরা।
বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্ণনা কখনও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। আর গত ২৬ মে কক্সবাজারে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক নিহতের ঘটনা এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে।
একরামুলের স্ত্রী একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করে দাবি করেছেন, এটি তার স্বামীকে হত্যার সময়কার। ওই রেকর্ডে এটা স্পষ্ট যে, একজন মানুষকে একতরফা গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কোনো বন্দুকযুদ্ধ নয়।
ইমরান এইচ সরকারকে আটকের বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তাকে র্যাব আটক করেছে বলে জেনেছি। তবে ছাত্র ইউনিয়নের বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়ে থানাকে অবহিত করা হয়নি। তাই এই বিষয়ে পুলিশের বিস্তারিত কিছু জানা ছিল না।’
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের সময় ব্যাপকভাবে পরিচিতি পান ইমরান এইচ সরকার।
ওই বছর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ডাকে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয় জনতা। পরে গড়ে উঠে গণজাগরণ মঞ্চ।
চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি পূরণ হওয়ার পরও গণজাগরণ মঞ্চ নানা ইস্যুতেই সক্রিয় আছে। তার বর্তমানে সরকারের কঠোর সমালোচক হয়ে উঠেছেন ইমরান।
জনতার আলো/বুধবার, ০৬ জুন ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.