জনতার আলো, স্টাফ রিপোর্টার: কাকরাইলে তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সকাল থেকেই সেখানে পুলিশ অবস্থান করছে।
এ ব্যাপারে রমনা মডেল থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক আকরাম বলেন, ‘সকালে সেখান কিছু সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি। সেখানে আমাদের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা ভাল বলতে পারবেন।’
তবে এ ব্যাপারে রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মঈনুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তিনি সেটি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘কাকরাইল মসজিদে দুই গ্রুপের উত্তেজনা ছিল। আমরা পুলিশ সেখানে গিয়ে মীমাংশা করে দিয়ে এসেছি। এখন আর কোন ঝামেলা নেই।’
রাজধানীর কাকরাইলে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র (মারকাজ) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধীরা দখল করে নিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে কাকরাইল মসজিদে এনে তাঁরা মারকাজে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। সাদের দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত আর এ দেশে বাস্তবায়িত হবে না বলেও তাঁরা ঘোষণা দেন।
মাওলানা সাদ কান্ধলভী ভারতীয় নাগরিক। তিনি তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর নাতি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে নিয়ে বিভেদের সৃষ্টি হয় সর্বশেষ বিশ্ব ইজতেমা থেকে। ওই সময় তাঁকে টঙ্গীতে ইজতেমায় যেতে দেওয়া হয়নি। বিরোধিতার মুখে কাকরাইলে তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন। বিভিন্ন সময় ইসলাম ধর্ম নিয়ে তাঁর কিছু বক্তব্যের জের ধরে এই বিরোধের সূত্রপাত হলেও নেপথ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে জানা গেছে।
কোন ধরনের মারামারি-হানাহানী এড়াতে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই মারকাজে পুলিশ মোতায়েন ছিল। দুপুরের দিকে পুলিশের রমনা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও সেখানে যেতে দেখা যায়। পুলিশ সেখান থেকে মোবাইল ফোনের জ্যামারের মতো যন্ত্রও উদ্ধার করেছে।
কাকরাইলের মুসল্লিরা জানান, সাদ-বিরোধীরা কয়েক দিন ধরে মারকাজ ও এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের জড়ো করতে শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাঁরা মারকাজ সংলগ্ন কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার দুটি কক্ষে মোবাইল ফোন ‘জ্যামার’ বসান। এতে পুরো মারকাজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সকালে দৈনন্দিন পরামর্শ সভা থেকে সাদের সিদ্ধান্ত আর না মানার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দেশে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১১ জন শুরা সদস্য আছেন। এরমধ্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব ও পার্শ্ববর্তী উলুম উদ দুনিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জুবায়ের আহমদের নেতৃত্বে পাঁচজন মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে রয়েছেন ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে বাকি ছয়জন। এই ১১ জনের যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন ছয়জন, যাঁদের ফয়সাল (সিদ্ধান্তদাতা) বলা হয়। শুরা সদস্যের মধ্যে কারা ফয়সাল হবেন, তা এত দিন মাওলানা সাদ নির্ধারণ করে দিতেন। সম্প্রতি আরও দুজন শুরা সদস্যকে তিনি ফয়সাল হিসেবে নিয়োগ দেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন জুবায়ের আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ শুরা সদস্য।
মারকাজে প্রতিদিন সকালে পরামর্শ সভা বা মাসোয়ারা বসে। এর নেতৃত্বে থাকেন একজন ফয়সাল। প্রতি সাত দিন পরপর এই নেতৃত্ব বদল হয়। এখন নেতৃত্বে রয়েছেন শুরা সদস্য মো. রবিউল হক, যিনি জুবায়ের আহমদের অনুসারী। সকালে তাঁর নেতৃত্বে যখন পরামর্শ সভা বসে, তখন বাইরে থেকে আসা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা লাঠি হাতে তাঁদের ঘিরে রাখেন। এর আগে মাদ্রাসাছাত্ররা শুরা সদস্য ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিমের দরজায় লাথি দেন। এতে পরামর্শ সভায় অংশ নেওয়ার পরিস্থিতি ছিল না। এ কারণে তাঁরা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেন।
দিল্লি থেকে সম্প্রতি শুরা সদস্য মো. মোশাররফ ও অধ্যাপক ইউনুস শিকদারকে ‘ফয়সাল’ হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাথিরা (তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা) এই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নন। তাঁরা বলছেন, দেশে মুরব্বিরা আছেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁদের সেই দাবি অনুযায়ী নতুন দুই শুরা সদস্যকে ফয়সাল হিসেবে ঘোষণার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা এবং মাওলানা সাদের দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৯২০ সালের দিকে ভারতে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.)। এখনো সারা বিশ্বের তাবলিগ জামাতের মূল মারকাজ দিল্লিতে। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মারকাজের নেতৃত্বে আসেন। তাঁর মৃত্যুর পর ইউসুফের ছেলে মাওলানা সাদ কান্ধলভী আমির হন।
জনতার আলো/শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.