জনতার আলো, মোঃ রিপন হাওলাদার { ক্রাইম চীফ }: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে, সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে মেস ও আবাসিক হোটেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন (২৫ জানুয়ারি) থেকেই মেস ও হোটেলগুলোতে নজরদারি শুরু হয়েছে। পুলিশের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী হোটেলে আগত অতিথিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে রুম বুকিং দেয়া হচ্ছে কি-না এসব নজরদারি করছেন গোয়েন্দারা। এছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন পেইজে এবং গ্রুপে ৮ ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে কোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা হচ্ছে কি-না সেগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা মেসগুলোতে জড়ো হয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সহিংসতা তৈরির চেষ্টা করতে পারেন এমন আভাসে থানাভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। থানা পুলিশ স্ব স্ব এলাকার মেসগুলোতে গিয়ে ভাড়াটিয়া ছাড়া অন্য কেউ থাকছেন কি-না তা নজরদারি করছে। ইতোমধ্যে নবাবপুর, হাইকোর্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পল্টন, ফকিরাপুলসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে।
নজরদারির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে হোটেলগুলোতে অতিথির নাম-ঠিকানা লেখা, ছবি তোলা, এনআইডি, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি, ফোন নম্বর রাখা ও ফোন দিয়ে নম্বর যাচাই করাসহ ৮টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হোটেলগুলো নির্দেশনামাফিক কাজ করছে কি-না তা নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফর্মে দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়িগুলোতে ভাড়াটিয়ারা থাকছেন কি-না সেটিও খেয়াল রাখা হচ্ছে।
৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে হাইকোর্ট, মৎস্যভবন ও পুরান ঢাকার বকশীবাজারে প্রস্তুত থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। টহল দেবে র্যাব।
যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সারা দেশের পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। নির্দেশনাগুলো হলো- যেসব স্থানে আগে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব স্থান চিহ্নিত করা করে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা। থানাসহ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো, পুলিশের সব সিসি টিভি ক্যামেরা সচল রাখা, টহল বা অভিযানে পুলিশ সদস্যরা একা না গিয়ে একসঙ্গে টহল দেয়া। নির্দেশনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্যামেরা রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তারা ছবি তুলে রাখতে পারেন।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি কোনো সহিংসতার আশঙ্কা করছি না, তবে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এদিন যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রোধে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবেই অবনতি না হয় সেজন্য পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া আছে।’
পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে সবসময়ই পুলিশের নজরদারি থাকে। ৮ ফেব্রুয়ারি কোনো মহল যদি সহিংসতার চেষ্টা করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
যে কোনো আন্দোলনে বাস-ট্রাকের মতো পরিবহনগুলো আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ করে আন্দোলনকারীরা। রায়ের দিন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে কি-না এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যানবাহন মালিকরা। রোববার ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে পরিবহন মালিকরা এমন শঙ্কার কথা জানান।
রায় পরবর্তী সৃষ্ট যে কোনো পরিস্থিতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়া রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে জনগণই তা প্রতিহত করবে, আর পুলিশতো আছেই।
পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘পুলিশের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। পুলিশ দৃঢ়তার সঙ্গে এ কাজ করে যাচ্ছে। যাতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকে সে জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।’
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, সেদিন কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। যে আগুন সন্ত্রাস একবার শুরু হয়েছিল, সেটি আর পুনরাবৃত্তি হতে দেয়া হবে না।
জনতার আলো/সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.