পরিবার হচ্ছে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রাথমিক এবং মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পরিবারকে বলা হয় শাশ্বত বিদ্যালয়। একটি শিশু তার জীবনের সর্বপ্রথম শিক্ষা লাভ করে তার পরিবার থেকেই। তাই তার নিজ পরিবারের পরিবেশ হতে হবে আনন্দময় ও শিক্ষাবান্ধব। শিশুর পরিবারে থাকতে হবে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ এবং বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। বর্তমান
প্রতিযোগিতামূলক সময়ে বাবা-মায়েরা সর্বদা শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুর সাফল্য ও জয়কে বড় করে দেখেন। এ মনোভাব শিশুদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে। আপনার সন্তান আজকে ভুল করবে তো কালকে সেই ভুল থেকেই শিখবে এবং জয়ী হবে।কখনই শিশুকে পরাজয়ের জন্য হতাশা দিবেন না।
শিশুকে খেলার ছলে বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয়গুলো শেখাতে হবে। শিশুকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে পরিবারের বাবা-মা,ভাই-বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শিশুর সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করতে হবে। শিশুর মনে দাগ কাটতে পারে এমন অশোভন আচরণ থেকে পরিবারের সদস্যদের বিরত থাকতে হবে। শিশুর সামনে কোন ধরনের নোংরা কথা,গাল-মন্দ, ঝগড়া-ঝাটি, মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি আরচন থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য মা-বাবারাও শিশুদের খেলার সাথী হতে পারেন। এতে পিতা-মাতা ও সন্তানদের মধ্যে বন্ধন আরোও দৃঢ় হবে।
এছাড়া আনন্দময় ও শিশু বান্ধব পরিবেশে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী।
বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি হতে হবে শিশুবান্ধব ও আনন্দময়।গ্রামীন বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষকগন শিশুদের উপর নানাপ্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন যা শিশুদের শিক্ষা গ্রহনে অনাগ্রহ সৃষ্টি করে থাকে। শাসন, নিয়ন্ত্রণ, ভীতিকর ও বিষাদময় পরিবেশ শিশুর শিক্ষা লাভকে বাধাগ্রস্থ করে।
বিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে না বুঝতে পারলে শিশুকে ধমক বা শাস্তি দিয়ে তাদের মনকে ছোট করে দেয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। শিক্ষকরা শিশুর মনের অবস্থা না বুঝে তার ওপর কোনো কাজ চাপিয়ে দেন যেটা মোটেও উচিৎ নয়। আজকাল অনেক শিক্ষক যদি ছাত্র কোন ভুল নিয়মে কোন অঙ্কের সমাধান করার চেষ্টা করে তবে সেই ছাত্রের উপর চরমভাবে চড়াও হয়। এটা মোটেও উচিৎ নয়। কারন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন যে,-“যে কখনও ভুল করেনা। সে নতুন কিছু করার চেষ্টাও করে না।” শিশুকে ভুল করতে সুযোগ দিন, নিশ্চয়ই তারা ভুল থেকেই নতুন কিছু শিখবে। শিশুরা জানবে সহজভাবে, আনন্দের সাথে। আনন্দ ছাড়া শিশুরা বিদ্যা অর্জনে আগ্রহী হবে না। আনন্দহীন শিক্ষার অভাবে গ্রামীন বিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষার্থীই অকালে ঝড়ে পড়ে। আনন্দের মাঝেই লুকিয়ে থাকবে আগামীর ভবিষ্যত প্রতিটি শিশুর শিক্ষা।এছাড়া আনন্দময় শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি বিদ্যালয়ে কিছু কিছু বিষয় থাকা আবশ্যক। শিশুর চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, ক্লাব, পাঠাগার থাকা আবশ্যক।
বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় থাকতে হবে রঙবেরঙের বিচিত্র ফুলের বাগান।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মন্দার কবলে পড়ে গ্রামীন অনেক শিশুকে বিভিন্ন ধরনের কর্মে নিয়োজিত হতে হয়। ফলে তারা অকালেই বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে। সুতারাং, শিশুশ্রম বন্ধে সরকারসহ সমাজের বিভিন্ন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজকে নিশ্চিত করতে হবে শিশুর অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের সু-ব্যবস্থা। আসুন আমরা সকল শিশুর জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টির সহায়ক ভূমিকা পালন করি। ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিই সেইসব গ্রামীন শিশুদের প্রতি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.