জনতার আলো, আবু সাঈদ, সিংড়া বিশেষ প্রতিনিধি: সেই কাক ডাকা ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই আটা, চিনি, তেল, কাড়াই নিয়ে চুলোর পাড়ে বসা। তার পর আটা মাখিয়ে শুরু হয় ঝিলাপী তৈরীর ব্যস্ততা। এর পর মানুষ জেগে উঠার আগেই দোকানে ঝিলাপীর পসরা সাজিয়ে শুরু হয় কেনা বেচা। সুস্বাদু মচমটে টাটকা ঝিলাপী খেতে দুর দুরান্ত থেকে আসেন ক্রেতারা। সেই সাথে আসেন পাইকার ব্যবসায়ীকরাও। ঝিলাপী তৈরীর এই কারিগরটির নাম আনিছুর রহমান।
বাড়ি চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশের বারুহাস বাজারে। আজ থেকে ১০ বছর আগে বাবা জয়নাল আবেদীনের কাছ থেকে মিষ্টি ও ঝিলাপী তৈরীর হাতে খড়ি নেন আনিছুর। সেই থেকেই শুরু। এখন আনিছুরকে মানুষ চিনেন ঝিলাপীর কারিগর হিসাবে।অনেকে শখ করে বলেন ঝিলাপী আনিছ।
সম্প্রতি একদিন সকালে কথা হলো ঝিলাপী আনিছের সাথে। আনিছুর জানায় আলাপ করেই বলুক আর শখ করে বলুক কেউ ঝিলাপী আনিছ বল্লেই মনে এক ধরনের খুশি লাগে। মনে হয় আমি আমার কাজে সফল হয়েছি। অনেক দুরের লোকজন আসেন তাঁদের আদর যত্ন করি। ঝিলাপী খেয়ে যখন তাঁরা বলে ভালো লেগেছে তখন আমারও মনটা ভালো লাগে।
আনিছুর আরও জানায় আমার ঝিলাপী ১ সপ্তাহ পযর্ন্ত বাড়িতে সংরক্ষন করে খাওয়া যায়। তাতে স্বাদ আর মচমটে খুব বেশি কমে যায় না। আনিছুরের দোকানে ঝিলাপী কিনতে এসেছেন এমন কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হয়।
মটর সাইকেল নিয়ে এসেছেন এক ভদ্রলোক । সাথে বউ ও ছেলে মেয়ে। বাড়ি বগুড়ার শেরপুর বাজার। তিনি বলেন-এখানে এক আত্তীয় বাড়িতে যাবো। এই বাজারে সুস্বাদু ঝিলাপীর কথা শুনে এখানে এলাম। খেয়ে ভালো লেগেছে তাই ২ কেজি কিনলাম।
সিংড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মোল্লা মোঃ এমরান আলী বলেন-চলনবিলের খিরা চাষীদের নিউজ করতে এসেছিলাম। এই বাজারে আনিছ ঝিলাপীর নাম শুনেছি। আজ খেয়ে দেখলাম। এই ঝিলাপীর মধ্যে গ্রাম-বাংলার সেই দেশীয় স্বাদ ও ঐতিহ্য অনুভব করলাম। তাঁর সাথে এসেছেন আরও পাঁচ সংবাদ কর্মী। তাঁরাও একই মন্তব্য করলেন।
পাইকার ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন-আমি তাড়াশের বিনসাড়া বাজার থেকে এসেছি। আমি প্রতিদিন ২০ কেজি ঝিলাপী পাইকার নিয়ে আমার বাজারে বিক্রয় করি। প্রায় ৪ বছর ধরে আনিছ ভাইয়ের সাথে আমার এই ব্যবসা। আল্লা দিলে ব্যবসা ভালই হচ্ছে।
কথা হলো আনিছের বাবা জয়নাল আবেদীনের সাথে। তিনি বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার খুব দুর্দিন ছিল। বাপের জমি নেই বল্লেই চলে। পরের বাড়িতে কাজ করে কোন রকম সংসার চালাতাম।সংসারের অভাব লেগেই থাকতো। একদিন হঠাৎ কি মনে করে গ্রামের জালসায় ঝিলাপীর দোকান দিলাম। লাভ ভালোই হলো। এর পর থেকে ঐ বছরই পাশের কয়েকটি গ্রামের জালসায় ঝিলাপী বিক্রয় করলাম। আমার কাছের এক বন্ধু মাওলানা মোজ্জাফরের পরামর্শে বাজারে ঘর নেই। ঝিলাপীর পাশা পাশি নানা রকম মিষ্টি ও দই তৈরী করে বিক্রয় শুরু করলাম। ব্যবসা বাড়তে লাগলো। এভাবে এক সময় সংসারের অভাব মুচন হলো।
আল্লার রহমতে ব্যবসার এই হালাল পয়সা দিয়ে বাজারে দোকান ঘরের পাশে পাকা বাসা করলাম। জমি কিনলাম। দোধাল গাভী কিনেছি। এখন আমি সুখি। ছেলে আনিছুরকে সব কাজ শিখিয়েছি। এখন ছেলেই সব করে।
জয়নাল আরও বলেন-দই, মিষ্টি যাই বানাই এখানে ঝিলাপীর কদর সবচয়ে বেশি। প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই মণ ঝিলাপী বিক্রয় হয়। আমার চেয়ে এখন আমার ছেলেকেই মানুষ বেশী চিনে।
জনতার আলো/বুধবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.