জনতার আলো, নিজস্ব প্রতিবেদক: এক বছর আগের এই সময়ে হাওরে অকাল বন্যায় ফসল হানির পর বাড়তে শুরু করা চালের দাম অবশেষে কমতে শুরু করেছে। আর এতে স্বস্তিতে শ্রমজীবী আর স্বল্প আয়ের মানুষরা।
গত এক মাসে বাজারে মানভেদে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে সাত টাকা পর্যন্ত কমার কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বোরো ধান পুরোপুরি তোলার পর দাম আরও কমে আসবে বলে আশাবাদী তারা।
দাম কমার ক্ষেত্রে ‘এগিয়ে’ আবার মোটা চাল। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন, তা বলাই বাহুল্য। নানা সময় দেখা গেছে, চালের দাম বাড়লে বাড়ে অন্য নিত্য পণ্যের দাম, আর কমলে প্রভাব পড়ে অন্য পণ্যেও।
রাজধানীর বাবুবাজার ও কারওয়ানবাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বোরো মৌসুমের চাল এখনও সেভাবে আসেনি বাজারে। গত মৌসুমের আর বিদেশ থেকে আমদানি করা চালই মেটাচ্ছে চাহিদা।
দেশে ধান উৎপাদনের প্রধান মৌসুম ইরি-বোরোর ধান এখন পাকতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আগাম উঠা হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। গতবারের মতো জলাবদ্ধতা বা ব্লাস্ট রোগে ফসলহানির খবরও এবার পাওয়া যায়নি।
আবার গত মৌসুমে ফসলহানির পর বিদেশ থেকে আমদানি করা চালে সরকারি গুদামগুলো এখনও টুইটুম্বুর। ভারতেও ধান উৎপাদনে ক্ষতির তথ্য আসেনি।
সব মিলিয়ে ভোটের বছরে চালের বাজার নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর এই বছর চালের দামের নিম্নগতি সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
চাল উৎপাদনে বড় প্রতিষ্ঠান রশীদ এগ্রো ফুডের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলছেন, সামনে দাম আরও কমবে। তিনি জানান, এই ধারণা থেকে তাদের কারখানা থেকে চাল কেনার পরিমাণ কমে গেছে। আর চাহিদা কমায় তারাও দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগে যেখানে ৫০ বস্তা চাল বিক্রি হতো সেখানে যাচ্ছে পাঁচ বস্তা।’
চাহিদার পাশাপাশি দাম কমার কারণ সম্পর্কে মিজানুর বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন চাল বাজারে আসবে। ওই সময় দাম কমার আশঙ্কায় খুচরা বিক্রেতারা নতুন করে চাল কিনতে চাইছে না। এজন্য একটু কম দামেই অনেকে চাল ছেড়ে দিচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারের মেসার্স আল্লাহর দাম রাইচ এজেন্সির মালিক দেলোয়ার হোসেন অনু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এজন্য বাজারে চালের দাম কম।’
‘কেজি প্রতি দুই থেকে সাত টাকা পর্যন্ত কমেছে। সামনে আরো কম হবে।’
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা ও গুটি চাল এখন কেজি প্রতি ৩৭ থেকে ৪০ টাকায়, তুলনামূলক সরু বিআর ২৮ হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৭ টাকায়, বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আর জনপ্রিয় সরু চাল মিনিকেট মানভেদে ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় ও নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থা টিসিবির ১ মের পরিসংখ্যানও চালের বাজারে দামের নিম্নগতির প্রমাণ রয়েছে। সেখানে দেখা যায় মোটা চাল এক মাসে সাত শতাংশ এবং সরু চাল দুই শতাংশ অবধি কমেছে।
অবশ্য এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। গত বছরের এই সময় মোটা চালের দাম চলতি বছরের সমান থাকলেও মাঝারি থেকে সরু চালের দাম ১১ থেকে ২৩ শতাংশ কম ছিল।
গত বছর মার্চের শেষ দিকেই হাওর এলাকায় বন্যায় ফসলহানির খবর এসেছিল। আর এরপর থেকেই বাড়তে শুরু করে দাম। হাওরের পর উত্তর এবং মধ্যাঞ্চলে বিশেষ করে যমুনা এবং শাখ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলেও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয় অতিবৃষ্টি আর বন্যায়। কোথাও কোথাও দেখা দেয় ব্লাস্ট রোগ।
আর আগের বছরের তুলনায় ধানের উৎপাদন অন্তত ২০ শতাংশ কম হওয়া, সরকারি গুদামে মজুদ সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমে যাওয়ার পর দাম আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এক পর্ায়ে মোটা চালের দাম কেজিতে ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মোটা চালের দাম উঠে যায় ৭৫ টাকা পর্যন্ত।
এরপর শুল্ক পুরোপুরি তুলে দিয়ে বেসরকারি খাতে আমদানি বাড়িয়েও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তবে চলতি মৌসুমে ধানের ভালো উৎপাদনের আভাসে চাল উৎপাদনকারী মিল আর বড় ব্যবসায়ীরাও তুলনামূলক কম দামে বাজারে চাল ছাড়ছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ২৪ এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামজাতকৃত মোট মজুদ ১১ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন।
এর মধ্যে চাল আট দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টন এবং গম তিন দশমিক ২৯ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া, বন্দরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে শূন্য দশমিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য। এরমধ্যে চাল ০.১৩ ও গম ০.২২ মেট্রিক টন রয়েছে।
জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ০৩ মে ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.