জনতার আলো, নাটোর জেলা প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে চলতি বছরের গত চার মাসে প্রকাশ্য দিবালোকে জন সম্মুখ থেকে সাত ব্যাক্তিকে অপহরণ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চলন্ত মাইক্রোবাস থামিয়ে পথচারীদের কোন অজুহাতে ডেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
পরে অপহৃতদের দিয়েই বাড়িতে স্বজনদের কাছে মোবাইল করিয়ে বিকাশে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ছয় জনকে ছেড়ে দিলেও একজনের গত দুই মাসেও কোন খোঁজ মেলেনি। অধিকাংশ অপহরণের ক্ষেত্রেই কালো রঙ ও কালো গ্লাস বিশিষ্ট মাইক্রোবাস ব্যবহার করা হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র দিনের পর দিন এ কাজ করে গেলেও কেউ আটক না হওয়ায় বর্তমানে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত ১লা মে এইচএসসি পরীক্ষার্থী অঙ্কুর কুমার মন্ডল বনপাড়া গীর্জা রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। পথে এক বৃদ্ধ অসুস্থতায় কাতরাচ্ছে দেখে কাছে গেলে বৃদ্ধ পকেট থেকে রুমাল জাতীয় বস্তু বের করে নাকে ঠেকিয়ে অঙ্কুরকে অচেতন করে।
পরে এ চক্রের অন্য সদস্যদের সহায়তায় পাশে দাঁড়ানো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়। পরদিন মোবাইল ফোনে বিকাশের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ঢাকার টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় ফেলে রেখে যায়।
৩০ এপ্রিল ক্লিনিক কর্মী শরিফুল ইসলাম (৩৭) কে বনপাড়া বাজার থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে মোবাইল ফোনে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে লালপুরের গৌরীপুর এলাকায় ফেলে যায়।
২৫ ফেব্রুয়ারী মাধাইমুড়ি গ্রামের রব্বেল সরকারের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪৭) কে বনপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে মাইক্রোবাসের ভিতর থেকে একজন ডাক দিলে কাছে যেতেই জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে।
পরে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে বাগাতিপাড়ার সোনাপুর এলাকায় ফেলে রেখে যায়। ১০ মার্চ রাত আটটার দিকে বনপাড়া পাটোয়ারী হাসপাতালের সুপারভাইজার গোলাম মোস্তফা স্বাধীন (৪৪) কে বনপাড়া বাজার থেকে একইভাবে মাইক্রোবাসে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।
এখনও তার কোন খোঁজ মেলেনি। কালিকাপুর গ্রামের মৃত আব্রাহাম কস্তার ছেলে জেমস ডি কস্তা (৪২) কে ২৮ জানুয়ারী বনপাড়া নতুন বাজার থেকে একই কায়দায় মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়।
পরে সিরাজগঞ্জে পৌছে মোবাইল ফোনের বিকাশে ৪৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়। ২১ জানুয়ারী মহিষভাঙ্গা গ্রামের মতিন মিয়াজীর ছেলে সুরুজ আলী (৩৫) কে বনপাড়া কলা হাটায় একটা কালো কাঁচের মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে সিরাজগঞ্জ কত দূর জানতে চায়।
কাছে এসে উত্তর দিতে গেলেই তাকে জোর করে টেনে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তাড়াশ এলাকায় ফেলে যায়।
এর এক সপ্তাহ আগে উপজেলার মামুদপুর গ্রামের বেকারী কর্মী রায়হানকে বনপাড়া বাইপাস মোড় একই ভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ঈশ^রদী এলাকায় ফেলে রেখে যায়।
এসব ঘটনার প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়েই মুক্তিপণ আদায়ের মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এ অপহরণকারী চক্রের কোন সদস্যকে আটক বা বিকাশ নম্বরগুলো কার তা বের করতে পারেনি পুলিশ।
অপহৃত ব্যক্তিদের অনেকেরই অভিযোগ পুলিশ এ সংক্রান্ত জিডি করতেও নিরুৎসাহিত করছে। পুলিশকে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শাহরিয়ার খান জানান, কেউ কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে ছাড়া পেয়ে এলেও সে ব্যাপারে তথ্য দিতে অনীহা দেখায়। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে কিছু করা যায়নি।
জনতার আলো/শনিবার, ০৫ মে ২০১৮/শোভন
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.