জনতার আলো, এম এ সাজেদুল ইসলাম (সাগর), জেলা ব্যুরো চীফ, দিনাজপুর: শাপলা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ডধঃবৎ ষরষু যার বৈজ্ঞানিক নাম ঘুসঢ়যবধ হড়ঁপযধষর। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। অথচ অযত আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এ নয়নাভিরাম বিলে-ঝিলে ভাসা ফুল।
শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল এ শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলা হয় নীল-মাহানেল। খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয় ভরাটের কারণে উত্তর জনপদের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা। সংরক্ষনের নেই কোনো উদ্যোগ।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান- জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে। শাপলা একটা জলজ উদ্ভিদ, যা প্রায় ৩’শ খ্রিস্টপূর্ব পুরনো। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণত পাঁচ প্রকার শাপলা ফুল দেখা যায়। সাদা, লাল, বেগুনি, হলুদ ও নীল রঙের। এর মধ্যে সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। গ্রামবাংলার আনাচে কানাচে হাওড়ে বিলে ঝিলে পুকুরে ডোবায় অহরহ দেখা যেত এ জলে ভাসা ফুল। তবে এখন অযতœ অবহেলায় আর কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উত্তর জণপদে দু’ধরনের শাপলা দেখতে পাওয়া যেত। একটি সাদা আরেকটি লাল। স্থানীয় ভাষায় সাদা শাপলাকে শাপলা আর লাল শাপলাকে রক্ত শাপলা বলা হয়ে থাকে। কৃষি জমি বালু দিয়ে ভরাট, প্রতি বছর ইরি জমি থেকে ইট ভাটার জন্যে মাটি কেটে নেয়া ইত্যাদি কারণে শাপলা আজ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের পুকুর, খাল-বিল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শাপলা ফুল যখন আবদ্ধ জলাশয়ে অনেক ফুটে থাকে তখন সেখানে এক অপরূপ সৌন্দর্য্যরে সৃষ্টি হয়।
ব্যবসায়ী পারভেজ রানা বলেন, আমার স্কুল পড়ুয়া ছোট বোন জাতীয় ফুল শাপলা চিনেনা। তাকে ছবি দেখিয়ে শাপলা চেনাতে হয়। খয়েরগুনি স:প্রা: বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওশীন তাবাসসুমকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে- শাপলা ফুল দেখিনি, চিনি না। শিক্ষকদের কাছে শুনেছি এবং বইয়ে পড়েছি শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো বালু দিয়ে ভরাটের কারণে সেখানে আর শাপলা জন্মাতে পারে না। এছাড়া আবদ্ধ জলাশয়গুলোতে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার ফলে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নবীন-প্রবীনদের অনেকেই বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা এক সময় হয়তো কাগজে-কলমে, পাঠ্য বইপত্রে লেখা থাকবে। দ্রুত বিলুপ্তির কারণে বাস্তবে আর হয়তো শাপলা খুঁজে পাওয়া যাবে না। উপজেলার ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন- এক সময় বিলে ঝিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলার বাহারী রূপে মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। শাপলা ছোটদের খুব প্রিয় ফুল। শাপলার ঢ্যাপ শিশুদের প্রিয় খাবার। গ্রামের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় ছিল এ শাপলা। অনেকে আবার বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।
এদিকে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মশিউর রহমান জাতীয় ফুল শাপলা যখন হারিয়ে যেতে বসেছে, তখন তিনি জাতীয় উদ্যান উন্মুক্ত আশুড়ার বিলে এ ফুলের বংশবিস্তার করতে উপজেলা স্কাউট দলের সদস্যদের নিয়ে তিনি শোভাবর্ধনে লাল শাপলা ফুলের চারা রোপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নির্বাহী অফিসার তার এমন উদ্যেগ বাস্তবায়নে সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গদের এগিয়ে আসার আহব্বান জানান।
জনতার আলো/বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.