জনতার আলো, মোঃ শাহিনুর রহমান, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি: প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে গিয়ে লাশ হয়েছে অর্নাস পড়ুয়া ছাত্রী সুরভী আক্তার। বিচার সালিশের সময় মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে। বুধবার বিকালে সুরভীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করলেও ধরা ছোয়ার বাহিরে রয়েছে বিচার সালিশে উপস্থিত প্রভাবশালী ও গ্রাম্য মাতব্বররা।
জানা যায়, জেলার ডোমার উপজেলার পাঙ্গামটকপুর ইউনিয়নের মৌজাপাঙ্গা লক্ষ্মীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাক্তারের মেয়ে সুরভী আক্তার হামিদা। মেয়েটি নীলফামারী সরকারী মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অর্নাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সুরভীর প্রেমের সর্ম্পক ছিল পাশ্ববর্তী ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ তেলীপাড়া গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী আফজাল হোসেনের ছেলে আরফান হোসেনের সাথে। আরফান প গড় সরকারী কলেজের ইসলামী ইতিহাসে অর্নাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
অভিযোগে জানা যায় প্রেমিক আরফানের কথা মতো সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে সুরভী বিয়ের দাবি নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে এসে উঠে। কিন্তু ছেলের পরিবার সুরভীকে মেনে না নিয়ে বাড়ির বাহিরে বের করে দিলে সুরভী আশ্রয় নেয় প্রেমিকের চাচা পাশের বাড়ি আশরাফ হোসেনের বাসার। তারাও সুরভীকে বাড়ির ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি। ওইদিন শীত উপেক্ষা করে সারা রাত মেয়েটি প্রেমিকের চাচার বাড়ির বাহিরে কাটিয়ে দেয়। পরেরদিন মঙ্গলবার প্রেমিক আরফানের বাবা বালাপাড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুঁইয়ার মাধ্যমে সালিশ বৈঠকের ব্যবস্থা করে। এদিকে অনাহারে সুরভী অবস্থা নিয়ে থাকে প্রেমিকের চাচার বাড়িতে উঠনে। মঙ্গলবার দিন গড়িয়ে রাত ৯টায় বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে বসে সালিশ বৈঠক। সেখানে সুরভীর গ্রামের প্রভাবশালী নেতা নুরুজ্জামান বাবলুসহ প্রেমিক আরফানের গ্রামের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম ও বেশ কিছু গ্রাম্য মাতব্বর উপস্থিত ছিল। সালিশ বৈঠকে সুরভীসহ তার বাবা বা পরিবারের কেউ উপস্থিত না থাকলেও সমাধান টানা হয় দেড় লাখ টাকায়। সালিশের মুচলেকায় প্রেমিকা সুরভীর স্বাক্ষরের জন্য সালিশ বৈঠককে উপস্থিতরা রাতেই সকলেই যায় আশরাফের বাড়িতে। কিন্তু সুরভী প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে ছাড়া কোন সালিশ মানে না বলে মুচলেকায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকার জানায়। এ সময় প্রেমিকের বাড়ির লোকজন সুরভিকে মারধর করলে সুরভী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এলাকাবাসী জানায় এরপর সুরভীকে একটি মাইক্রোতে করে ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা।
বুধবার সকালে ডিমলা উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাশেদুজ্জামান জানান, রাত আড়াইটার দিকে একটি মাইক্রেবাসে এক নারী রোগী আনা হয়। কিন্তু আমরা রোগীকে মৃত অবস্থায় পাই। সঙ্গে দুইজন মহিলা ও ৩/৪ জন পুরুষ ছিল। মৃতার নাম জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে পারেনি। এক পর্যায় তারা সকলে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। বিষয়টি ডিমলা থানায় অবগত করি। তিনি আরো বলেন সকাল হতে হঠাৎ করে মৃতার মুখ ও নাক দিয়ে ফ্যানা বের হয়। ডিমলা থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, হাসপাতাল হতে বিষয়টি অবগত হবার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা হয়। এরা হলো ওই মেয়েটির প্রেমিকের বাবা আফজাল হোসেন, মামা ফসিয়ার রহমান ও চাচা শাহাজাহান আলীকে। খবর দিয়ে নিয়ে আসা হয় মেয়েটির বাবা আব্দুল সাক্তারকে। এরপর সুরতহাল শেষে হাসপাতাল হতে সুরভীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরন করা হয় জেলার মর্গে। তিনি বলেন ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা বলা হয় বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান শুনেছি ফেসবুকে ও পরে মোবাইলে তাদের নাকি প্রেমের সর্ম্পক হয়। মেয়েটি বিয়ের দাবি নিয়ে ছেলের বাড়ি এলে ছেলে পক্ষ আমার কাছে সালিশের জন্য আসে। ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাত ৯টায় ইউনিয়ন পরিষদে বিচার সালিশ বসলেও আমি কিছুক্ষন ছিলাম। জরুরী কাজে আমাকে অন্যত্র চলে যেতে হয়। যারা ছিল তারা কিভাবে বিচার সালিশ করেছে আমি জানি না। বুধবার সকালে জানতে পারি মেয়েটি নাকি মারা গেছে।
এদিকে সুরভীর বাবা নিরিহ কৃষক আব্দুস সাক্তার কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন আমি আমার মেয়ের মৃত্যু জন্য যারা দায়ি তাদের বিচার চাই। এ রিপোট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি তবে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সুরভীর পরিবার।
জনতার আলো/বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.