জনতার আলো, এম এ সাজেদুল ইসলাম (সাগর), জেলা ব্যুরো চীফ, দিনাজপুর: বিনোদন ও পিকনিকের জন্য এক অসাধারন ও অনির্বাচনী কেন্দ্র স্বপ্নপুরী। এক বার গেলে বার বার যেতে মন ছট ফট করে এই উত্তর অ লের নবাবগঞ্জের স্বপ্নপুরী।
দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার এবং ফুলবাড়ি উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে, এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিরোমিটার উত্তরে আফতাবগঞ্জ এলাকার প্রত্যান্ত পল্লী অ লের গহীন বনজঙ্গল এবং মজা পুকুর সংস্কার করে প্রায় দুই শত একর জমির উপর নির্মিত উত্তর বঙ্গের মনোরম,ছিমছাম ভ্রমন কেন্দ্র হচ্ছে স্বপ্নপুরী।
নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান,বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় পাটির জেলা সভাপতি, সাংস্কৃতিক ও প্রকৃতি প্রেমিক আলহাজ্ব মোঃ দেলোয়ার হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যেগে একটি বিনোদন (পিকনিক) কর্নার তোলার পরিকল্পনার নিয়ে ১৯৮৯ খ্রিঃ গুটি গুটি পায়ে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৯০ সন থেকে শুরু হয় স্বপ্নপুরীর পদ যাত্রা।
এই স্বপ্নপুরীতে রয়েছে। শিশুপার্ক,চিড়িয়াখানা, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার বন্য প্রানী যেমন-বাঘ,ভাল্লুক, অজগর,মদন,শুকুন,বানর,হরিন বিভিন ধরনের বাহারি কবুতর,পাঁচপায়ের গরু প্রভিতি উল্লেখ যোগ্য প্রাণী।
স্বপ্নপুরীতে আরো রয়েছে কৃত্রিম চিড়িয়া খানা, ঝর্ণাধারা,নৌবিহার,সবুজ গাছের ছায়ার নিছে বিশ্রামাগার,দেশি-বিদেশী হাজারো ফুলের বাগান, দেখতে কি চমৎকার সারি সারি দেবদারু গাছ, মাটিতে নেমে আসা কৃত্রিম রংধনু, আরো রয়েছে পর্যটকদের জন্য মাটি ও দালনের অতি আকর্ষণীয় কটেজ ও রেষ্ট হাউস।
এছাড়াও রয়েছে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংরাদেশের সকল আন্দোলন ও সংগ্রামের আর্টিফিসিয়ালের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে দেখা বা জানার জন্য দেয়লে দেয়ালে বা দর্শণীয় জায়গায় চিত্র তৈরী করা হয়েছে।
এসব তদারকির জন্য দিবা রাত্রি আগত ভ্রমনকারী অতিথীদের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার জন্য সার্বিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন কেটাগরীর শ্রমিক ও কর্মচারিগণ।
স্বপ্নপুরীর পিকনিক কর্ণারটি ইতি মধ্যে উত্তরা লের মানুষের পাশাপাশি সমগ্র দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় দর্শণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বছরে ৩৬৫ দিনই হাজার হাজার মানুষ এখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসে বিনোদনের জন্য। তবে ডিসেম্বর মাস থেকে শিতের শুরু আর তখন থেকে শুরু হয় স্বপ্নপুরীতে পিকনিক পাটির ভিড়।
স্বপ্নপুরীতে বাস,মাইক্রোবাস,মিনিবাস,মটোরসাইকেল,ভ্যান,টেম্পু, অটোবাইক,বাইসাইকেল এমনকি স্থানীয় লোকজন পায়ে হেঁটেও বিনোদন জন্য আসেন। স্বপ্নপুরীকে বিনোদন প্রেমিকদের জন্য স্বপ্নপুরীকে স্বপ্নের মতো সাজাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষ।এই স্বপ্নপুরীতে বাংলাদেশ চলচিত্র কর্তৃক প্রায় ২৫টি বাংলা সিনেমা, নাটক ও মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং হয়েছে।
এছাড়াও স্বপ্নপুরী সেরা কন্ঠ অনুষ্টানের আয়োজন করেছে। স্বপ্নপুরীতে দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন গুণীজন, রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ, বুদ্ধিজীবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মনা ব্যক্তিবর্গ পরিদর্শন করে গেছেন।
স্বপ্নপুরীতে বিনোদনের জন্য শীত মওসুমে প্রতিদিন প্রায় বিশ্ব হাজারের বেশী দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। শীত মওসুম ছাড়াও সারা বছর বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ ঘুরতে আসেন পরিবার নিয়ে।
সপ্নপুরীতে যাতায়াত ও প্রবেশ মূল্য
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে দুরপাল্লার বিভিন্ন প্রকার কোচ এবং ঢাকা থেকে প্রতিনিয়োত ছেড়ে আসে কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে,আন্তঃনগর ট্রেন নীলসাগর, দ্রুতযান, একতা একপ্রেস এ ফুলবাড়ি এসে স্বপ্নপুরীতে যাওয়া যায়। এ ছাড়াও প্লেনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর নেমে বাস যোগে স্বপ্নপুরীতে আসা যায়।
স্বপ্নপুরীর ভিতরে প্রবেশ করতে এক হাজার পাঁচ শত টাকা, পিক আপ-মিনিট্রাক আটশত টাকা, মাইক্রোবাস পাঁচ শত টাকা, মিনিবাস দুইশত টাকা, র্চাজার-ইজি বাইক তিনশত টাকা, নছিমন-করিমন-স্যালোমেশিন চালিত গাড়ি আটশত টাকা,রিকশা-ভ্যান দশ টাকা, মোটরসাইকেল পার্কিং বিশ টাকা,বাই সাইকেল দশ টাকা, এবং প্রতিজন প াঁশ টাকা গুনতে হয়।
এ আয় স্বপ্নপুরীর বিভিন্ন কর্মরত কর্মচারিদের বেতন ভাতা মিটিয়ে বাকি টাকা রক্ষনাবেক্ষনে এবং সংস্কার করার কাজে ব্যয় করা হয়। এ ছাড়াও দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ছাড়াও ভিতরে আলাদা আলাদা বিভিন্ন রাইডের জন্য টাকা গুনতে হয়।
এ ছাড়াও পর্যটক ও ভ্রমনকারীদের থাকার জন্য কর্তৃপক্ষ মনোরম পরিবেশে আর্কশনীয় কটেজ বা রেষ্ট হাউস তৈরী করেছেন।
নীলপরী,রজনীগন্ধা,নিশিপদ্ম,চাঁদনী,সন্ধাতারা, ও রংধনু নামে এসব রেষ্টহাউস ভাড়ায় রাত্রী যাপন করা যায়। রেষ্ট হাউসে সিঙ্গেল,ডাবল, ও তিন রুম বিশিষ্ট এসব রুম পাওয়া যায়।
বুকিং ও বিস্তারিত তথ্যের জন্য ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এখানে একটি অত্যাধুনিক হোটেল,চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, মুক্তিযুদ্ধের স্মরনে স্বতন্ত্র স্পট, পাখির রাজ্য, মাছের রাজ্য, রেলকার,রুপকার, মানবিক চৈতণ্যের ভাস্কর্য শিল্প ইত্যাদি নির্মানের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্নপুরীর সফল বাস্তবায়নে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তিনি হচ্ছেন প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোঃ দেলোয়ার হোসেন। নেপথ্যে ছিলেন তারই সহোদর সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু। বর্তমানে মরহুমের বড় ছেলে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট অফ মেম্বার মোঃ শিবলী সাদিক বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে আসছেন।
স্বপ্নপুরীর বিল্ডিং ডিজাইন করেছেন দিনাজপুর হোম প্ল্যানের ইঞ্জিনিয়ার দেবাশীষ। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে স্বপ্নপুরীর সকল ছবি হয়েছে প্রাণবন্ত। এদের মধ্যে রয়েছেন জয়পুরহাটের আজাদ হোসেন(আজাদ), বগুড়ার চিত্র শিল্পী মোঃ সাহেবুর রহমান(ফটন) ও নুরন্নবী প্রমুখ।
স্বপ্নপুরী ভৌগলিক অবস্থান গতভাবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে সোনালী সম্ভাবনাময় এবং বিগত বছর গুলোতে এ শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। স্বপ্নপুরী উত্তরবঙ্গ তথা সমগ্র দেশজুড়ে একটি আর্কষণীয় বিনোদন(পিকনিক) বা ভ্রমন স্পট হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে। স্বপ্নপুরীর প্রবেশ দ্বারে দুটি বিশাল আকৃতির পরী দন্ডায়মান। ওরা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সদা-সর্বদা প্রস্তুত।ছায়া আচ্ছাদিত স্থানে রয়েছে মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সু-ব্যবস্থা।
এ ছাড়াও রয়েছে মুক্তম । মে ভাস্কর্য নৃত্যরত তরুন-তরুণী সৃষ্টি করেছে স্বপ্নীল ও সাংস্কৃতিক আবহ। সময় যেন এখানে এসে থেেেম দাড়ায়। হারিয়ে ফেলে চলার গতি। এখানে রয়েছে শিশু পার্ক, ঘোড়ার গাড়ী চড়ার আনন্দ, রবীন্দ্র-নজরুলসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য, জীবন্ত চিড়িয়া খানা, সৌরজগত, নভথিয়েটার, স্বপ্নপুরী সত্তাধিকারীর শু-বিশাল আলিশান বাংলো, বিভিন্ন প্রকার ফলোজ, বনোজ গাছ-গাছালি স্বপ্নপুরীকে সৃষ্টি করেছে এক নতুন মাত্রা।
সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে স্বপ্নপুরিকে একটি নতুন জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিনত করা যেতে পারে। এছাড়াও স্বপ্নপুরীতে অবস্থান করে ফুলবাড়ি কয়লাখনি,কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ঘুরে আসলে মনে হয় এ যেন এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা অর্জন ।
জনতার আলো/রবিবার, ১২ আগস্ট ২০১৮/শোভন
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.