জনতার আলো, মোঃ জুলহাজুল কবীর, নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: দিনাজপুর চাইল্ড কেয়ার স্কুল, নাকি চাইল্ড কিলার স্কুল? দিনাজপুরের নবাগঞ্জ উপজেলার হেয়াতপুর চাইল্ড কেয়ার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের শিক্ষক মানিক মিয়ার বেত্রাঘাতে এক ছাত্র চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে। এ ঘটনায় গত শনিবার নবাবগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নং ২৮ ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাইল্ড কেয়ার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলে প্রধান শিক্ষকের অলিখিত নির্দেশ রয়েছে কোনো ছাত্র এক দিন স্কুলে না এলে তাকে ১০টি বেতের আঘাত করার। দশম শ্রেণির ওই ছাত্র অসুস্থতার কারণে ১৬ জুলাই স্কুলে যেতে পারেনি। এ কারণে ১৭ জুলাই স্কুলে গেলে শিক্ষক মানিক বেত দিয়ে প্রহার শুরু করেন। একপর্যায বেতের আঘাত ছাত্রের ডান চোখে লাগে। এতে তার চোখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে শুরু করে। তাকে দ্রুত বিরামপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেদিনই তাকে চক্ষু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
চক্ষু ওয়ার্ডের সহযোগী অধ্যাপক হারিসুল ইসলাম হিরু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাত্রকে ঢাকায় রেফার্ড করেন।
হারিসুল ইসলাম হিরু জানান, ছাত্রের ডান চোখের আঘাত গুরুতর। তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। চোখ ভালো হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
মামলা বাদী ছাত্রের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, ভাগ্নেকে ঢাকায় হারুন আই ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসক বিদেশে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। তার চোখের আইরিশ/রেটিনা বেতের তীব্র আঘাতে ছিটকে বেরিয়ে গেছে। তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।
ছাত্র নির্যাতনের বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষক আনিছুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে শিশুর ওপর অমানবিক, মর্যাদাহানিকর আচরণ বা নির্যাতন না করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। ২০০৮ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশব্যাপী আদেশ দেয়। এ বিজ্ঞপ্তির ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হেয়াতপুর চাইল্ড কেয়ার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু তারা দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পড়াচ্ছে। এই ছাত্রদের অন্য স্কুলের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করানো হয়। এতে যে স্কুল থেকে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করা হয় সে স্কুলের পাসের হার ঠিক থাকে। অন্যদিকে পাঠদানের অনুমতিবিহীন স্কুলগুলো পায় মোটা অঙ্কের টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইল্ড কেয়ার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। মামলা তদন্ত কারী কর্মকর্তা এস, আই কিবরিয়া জানান, আসামি পলাতক রয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
জনতার আলো/বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮/শোভন
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.