জনতার আলো, এম এ সাজেদুল ইসলাম(সাগর), নবাবগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধি: গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. লুৎফর রহমান। বর্তমানে দিনাজপুর শহরের বাসিন্দা। গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুরে। তিনি ২০১৬ সালে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক হন। কিন্তু সম্প্রতি দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ থেকে ২০০৫ সালের তিন হাজার টাকার বকেয়া বিল পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিল পেয়ে আকাশ থেকে পড়েন লুৎফর রহমান।দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, তিনি ২০০৫ সালে পিডিবির গ্রাহকই ছিলেন না। অথচ তাঁর নামেও ২০০৫ সালের ২ হাজার ৫১৫ টাকার বকেয়া বিল পরিশোধের নোটিশ দেয়।
বিরামপুর পৌর শহরের পূর্ব জগন্নাথপুর মহল্লার বাসিন্দা সমাজ সেবা কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত মাঠ পরিদর্শক আবদুস সোবহান। তিনি বর্তমানে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ এর একজন গ্রাহক। তাঁর হিসাব নং ৭৫২/৩৭০০। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২০০৬ সালের ২৫ জুন আবদুস সোবহানকে একটি প্রত্যয়ন দিয়ে জানায় যে, ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বাবদ কোন বকেয়া নেই।
সেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ গত ২৫ এপ্রিল আবদুস সোবহানকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের একটি চুড়ান্ত নোটিশ পাঠিয়ে জানায় যে, ২০০৫ সালের পাঁচ মাসের মোট ৩০৮৬ টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই টাকা গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ধরনের নোটিশে ক্ষুব্ধ ও আতংকিত হয়ে পড়েন আবদুস সোবহান। একই অভিযোগ করেন একই মহল্লার বাসিন্দা সামছুজ্জোহা ফারুকী শুধু লুৎফর রহমান, হেলাল উদ্দিন আর আবদুস সোবহান নয় সম্প্রতি ছয় উপজেলার ৯ হাজার ৮৮২ জন গ্রাহককে হাঠাৎ করে তের বছরের পুরোনো বকেয়া বিল পরিশোধ নতুবা সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের চুড়ান্ত নোটিশ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ বলছে ২০০৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের বিরামপুর, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর এবং ঘোড়াঘাট উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহের বাংলাদেশ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ এর কাছে হস্তান্তর করে। সে সময় পিডিবি ওই ছয় উপজেলার ৯ হাজার ৮৮২ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা বকেয়া অনাদায়ের হিসাব দিয়ে যায়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্দেশে সেসব বকেয়া বিল আদায়ের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ছয়টি উপজেলার শত শত গ্রাহক জানিয়েছেন, বকেয়া বিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেসব বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অনেকের নামে সে সময় কোন সংযোগও ছিলোনা।
বিরামপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ যে সকল ভুয়া বিল গ্রাহকদের দিয়েছে গ্রহকরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের ভয়ে যদি সেসব বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতো তা হলে সেসব বিলের টাকা কার পকেটে যেতো। তিনি অভিযোগ করে বলেন বর্তমান জিএম সন্তোষ কুমার দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগদান করার পর থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া মুচলেকার বিনিময়ে সংযোগ, নকশা পরিবর্তন, অবৈধভাবে গভীর নলকূপের সংযোগ দেওয়া, উৎকোচ না পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ গ্রাহকদের স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা শুরু করেছেন। ফলে ছয় উপজেলার গ্রাহকগণ অচিরেই পল্লী বিদ্যুৎ থেকে আবারো পিডিবিতে যাওয়ার আন্দোলন করতে তাগাদা দিচ্ছেন। জিএম সন্তোষক কুমারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নতুন নতুন খাত তৈরী করে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতে আবারো ফিরে এসেছে দালালদের দৌরত্ব।
দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা অভিযোগ করে জানান, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এ ধরনের বকেয়া আদায়ের নির্দেশ দেননি। জিএম সন্তোষ কুমার সাহা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ ভুতুড়ে বিল দিয়ে এলাকাবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছেন। সরকারের শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছেন।
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ এর পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি বিরামপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শিশির কুমার জানান, জিএম সন্তোষ কুমার কারো সাথে পরামর্শ না করেই এসব ভূয়া বিল দিয়েছে। তিনি যে মন্দির কমিটির সভাপতি সেই মন্দিরের নামেও ১৬ হাজার টাকার ভুয়া বিল দিয়েছে।
এদিকে ক্ষুব্ধ গ্রাহকগন গত ২৯ এপ্রিল বিরামপুর উপজেলা পরিদর্শনে আসা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর উপস্থিত দিনাজপুর জিএম সন্তোষ কুমার সাহার কাছে বিষয়টি জানতে চান।
সন্তোষ কুমার সহা জেলা প্রশাসককে জানান যে, মন্ত্রণালয় এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী বকেয়া আদায়ের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে যে সব গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের প্রত্যয়ন রয়েছে সেসব গ্রাহকের বকেয়া মওকুফ করা হবে।
এ সময় জেলা প্রশাসক জিএম সন্তোষ কুমারের কাছে জানতে চান যে, তাঁর কাছে ১৩ বছরের পুরোনো কোন বিদ্যুৎ বিলের কাগজ আছে কি না? যে সকল গ্রাহকের প্রত্যয়ন হারিয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে সে সকল গ্রাহকের কি হবে? কিন্তু সন্তোষ কুমার সাহা জেলা প্রশাসনের এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
এর পরের দিন শত শত ক্ষুব্ধ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ কার্যালয়ে গিয়ে জিএম সন্তোষ কুমারের কাছে গিয়ে ভুয়া বকেয়া বিলের নোটিশ পাঠানোর কারণ জানতে চান। কিন্তু সন্তোষ কুমার গ্রাহকদের প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকগন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ কার্যালয়ে গিয়ে জিএম সন্তোষ কুমারের কাছে মন্ত্রণালয় এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বকেয়া আদায়ের আদেশ দেখতে চান। তাঁর দেওয়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দেওয়া ২৩, ২৫ এবং ২৬ এপ্রিলের দেওয়া তিনটি চিঠিতে দেখা গেছে পিডিবির বকেয়া বিল অবলোপনের জন্য পিডিবির যে সকল গ্রাহক মৃত্যুবরণ করেছে, উত্তরাধিকার নেই, অস্তিত্ব নেই, পুর্ণাঙ্গ তথ্য নেই, এসকল গ্রাহকদের চিহ্নিত করে তথ্য পাঠানোর জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সমিতিগুলোকে অনুরোধ করে। কোন চিঠিতেই বকেয়া আদায়ে নোটিশ প্রদানের নির্দেশ নেই।
জনতার আলো/রবিবার, ২০ মে ২০১৮/শোভন
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.