জনতার আলো, বিনোদন ডেস্ক:দুইদিন কারাভোগের পর জামিন পেলেন সালমান খান। আজ সন্ধ্যা নাগাদ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে। এরপর থেকে যোধপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ১৮দিন কারাভোগ করলেন সালমান।
বাদি পক্ষের আইনজীবী মহিপাল বিষ্ণোই সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘জামিনের জন্য এ অভিনেতাকে ২৫ হাজার রুপি করে দুটি বন্ড কিনতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না। আগামী ৭ মে স্বশরীরের তাকে আবারো আদালতে হাজির হতে হবে।’
শনিবার সকালে এ অভিনেতার জামিনের শুনানি শুরু হয়। আজ দুপুরে এ অভিনেতাকে জামিন দেন সেশন কোর্টের বিচারক রবীন্দ্র কুমার জোশি। শুক্রবার এই শুনানির চূড়ান্ত রায় হওয়ার কথা থাকলেও তা মুলতবি করেছিলেন তিনি। রুরাল কোর্ট ও রাজস্থান উচ্চ আদালতে এ মামলার পূর্বের নথিপত্র পর্যালোচনা করার জন্য শুনানির তারিখ পিছিয়েছেন বলে জানা গেছে। জামিন শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সালমানের বোন আলভিরা ও অর্পিতা।
গত বৃহস্পতিবার যোধপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেব সিং খাতরি বহুল আলোচিত কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় সালমানকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ১০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয় এ অভিনেতাকে। অভিযুক্ত অন্যরা এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
১৯৯৮ সালে হিন্দি সিনেমা হাম সাথ সাথ হ্যায়’র শুটিং চলাকালীন যোধপুরের কাছে কঙ্কনী গ্রামে বিরল প্রজাতির কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগ ওঠে সালমানের বিরুদ্ধে। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে মামলাও দায়ের হয়। সিনেমাটিতে সালমান খানের সহশিল্পী সাইফ আলী খান, সোনালী বেন্দ্রে, টাবু ও নীলমকেও এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
প্রায় দুই দশক ধরে চলে আসছিল এ মামলা। ভারতের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী বিরল প্রজাতির কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ এই হরিণকে ভক্তি করেন এবং এটি রক্ষায় কাজ করে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে যে, ওই সিনেমার শুটিং চলাকালীন নিজেই গাড়ি চালিয়ে শিকারে বেরিয়েছিলেন সালমান। সেই গাড়িতে ছিলেন টাবু, সাইফসহ অন্যরা। গাড়ির মধ্য থেকেই গুলি করে হরিণ হত্যা করেন সালমান। গুলির আওয়াজ শুনে দৌড়ে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃত হরিণটিকে পড়েও থাকতে দেখেন তারা। পাশাপাশি জিপসি গাড়িটি যে সালমান চালাচ্ছিলেন সেটিও দেখতে পান। তারা গাড়ির পেছনে ধাওয়া করেন। কিন্তু গতি বাড়িয়ে এলাকা থেকে উধাও হয়ে যান তারকারা।
এরপরই সালমান খান ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সালমানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারা এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ৫১ ও ১৪৯ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। যদিও বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে আসছেন সালমান। তার আইনজীবীর দাবি ছিল, বন্দুক দিয়েই যে হরিণটিকে হত্যা করা হয়েছে এরকম কোনো প্রমাণ মেলেনি। মিথ্যা সাক্ষী ও কাগজপত্র দিয়ে মামলায় সালমানকে ফাঁসানো হচ্ছে।
এর আগে ২০০৬ সালে এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল সালমানকে। কয়েকদিন জেলেও ছিলেন এ অভিনেতা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জামিনে মুক্তি পান তিনি। একই বছর সালমানকে দেওয়া আদালতের সাজা স্থগিত করেন রাজস্থান আদালত।
২০১৬ সালে রাজস্থান উচ্চ আদালত এ মামলা থেকে এই অভিনেতাকে অব্যাহতি দেন। আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালমানের বন্দুকের গুলিতেই যে হরিণগুলোর মৃত্যু হয়েছে তার কোনো প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু রাজস্থান সরকার এ বিষয়ে আপিল করলে সালমানকে পুনরায় আদালত থেকে নোটিশ পাঠানো হয়।
গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। বাদি পক্ষের আইনজীবী প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য তুলে ধরেন। ২৩ অক্টোবর বাদি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর সালমানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয় এবং তা শেষ হয় চলতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর মামলার সঙ্গে জড়িত অন্য অভিযুক্তদের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। গত ২৪ মার্চ এটি শেষ হয়।
জনতার আলো/শনিবার, ০৭ এপ্রিল ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.