জনতার আলো, খন্দকার জালাল উদ্দীন, দৌলতপুর প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পর পর তিনটি কন্যা সন্তানের জননী হওয়ায় মা কে তালাক তালাক দিয়েছে তার স্বামী। ৯ দিনের এক কন্যা শিশুকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে গ্রামের স্থানীয় মাতব্বররা। ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি পাইকপাড়া এলাকায়। এই নিয়ে এলাকায় ব্যপক সমালোচনা চলছে।
জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের হযরত আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম একই এলাকার রেজাউল হকের মেয়ে জেসমিনের সাথে গত ১০ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে সুখেই ছিলো তাদের সংসার। পরে তাদের ২টি কন্যা সন্তান হয়। তারপর ৭ নভেম্বর আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় জেসমিন। এই নিয়ে তিনটি সন্তানের জন্য দেয় সে। এই অপরাধে ৯ দিনের শিশুকে সহ তাকে তালাক দেয় তার স্বামী রবিউল।
পরে স্থানীয় মাতব্বররা মিলে দর কসাকশি করে ঐ শিশুকে ১ লক্ষ্য ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় তারা। শিশুটিকে একই এলাকার ঈদগাহ পাড়ার আয়ূব আলীর কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে বাচ্চাটি মায়ের কোন থেকে বি ত হয়। শিশুটিকে হারিয়ে এবং স্বামীর সংসার হারিয়ে প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেসমিন। ভুক্তভোগী জেসমিন অভিযোগ করেন, তিনটা বাচ্চা হওয়ায় আমাকে আমার স্বামী জোর করে স্থানীয়দের সহায়তায় তালাক দিয়েছে। সেই সাথে আমার ৯ দিনের মেয়েকে মন্ডলরা বিক্রি করে দিয়েছে।
জেসমিনের বাবা রেজাউল হক সাংবাদিকদের জানান, কিছুদিন আগে রবিউল আমার এক আত্মীয় এর ছেলের বৌকে নিয়ে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। এর পর থেকেই আমার মেয়ের উপরে অত্যচার করে। কিছুদিন আগে আবার একটি মেয়ে হওয়ার পরে আমার মেয়েকে তালাক দেয়, খলিশাকুন্ডি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের বাড়িতে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৷ সালিসী সভায় সভাপত্বিত করেন শহিদুল ইসলাম। সালিসে ৩ কন্যা সন্তানের জননী জেসমিন কে তার স্বামী কাজী সামীমের মাধ্যমে তালাক দেয়। গত ৩দিন আগে স্থানীয় মেম্বার শরিফুল, মন্ডল খলিসাকুন্ডি পুলিশ ক্যাম্পের দালাল শহিদুল ইসলাম, খলিসাকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীয়ান আসলাম টাকার বিনিময়ে আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে দেয়। এবং আমার নাতনিকে বেচে দেয়। আমার মেয়ে বাচ্চা না দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা জোর করে কেড়ে নিয়ে গেছে। পরে শুনছি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তারা বিক্রি করে দিয়েছে। এদিকে একাধিকবার রবিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের কিছু অসাধু মন্ডলরা এ কাজ করেছেন। মাত্র ৯ দিনের বাচ্চাকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। বাচ্চাকে হারিয়ে জেসমিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি খোঁজ খবর নিয়ে আপনাকে জানাবো। ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি তবে কারা বিচার করেছে বা কি হয়েছে সেটা জানি না।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জনতার আলো/মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.