জনতার আলো, স্টাফ রিপোর্টার: ঈদ আনন্দ শেষে বিষাদের আভাস দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উজানে ভারতে বৃষ্টিপাত বাড়ায় আর বন্যা দেখা দেয়ায় বাংলাদেশেও উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা অববাহিকা এবং পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে তারা।
এরই মধ্যে উত্তর পূর্বের সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজার শহর তলিয়ে গেছে পানিতে। দুই দিন ধরে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে। আর প্রশাসনও দুর্গত এলাকায় জরুরি সহায়তার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে স্থানীয় কর্মকর্তাদের, তাৎক্ষণিক নির্দেশে যেন কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে নির্দেশ দেয়া আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর অববাহিকায় পানি ক্রমেই বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদনদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এ কারণে এমাসের শেষ সপ্তাহে বন্যা হতে পারে বলে আমি ধারণা করছি।’
বৃষ্টির ঋতু বর্ষা চলে এসেছে। এখনও আষাঢ়ের বর্ষণের দেখা নেই। তবে এখানে বন্যা হয় উজানে ভারতে বৃষ্টি আর বন্যায়। এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই পানি বাংলাদেশ হয়েই বঙ্গোপসাগরে গিয়ে নামে। আর পানির এই ঢল আসলেই দেখা দেয় বন্যা।
সাধারণত জুলাই-আগস্ট মাসে বন্যার মৌসুম হিসেবে পরিচিত। গত বছর একটু আগেভাগে এই পানি আসায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তবে এবার ধান কাটা হয়ে যাওয়ায় এক দিন থেকে স্বস্তি আছে।
গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, দেশে বন্যা দেখা দিলে প্রথমে আক্রান্ত হয় বৃহত্তর সিলেট। সুরমা, কুশিয়ারা, মনু নদীর ঢল ভাসিয়ে নেয় দুই কূল।
গত বছর অকাল বন্যায় ফসলহানি হয়েছিল হাওর এলাকার সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণায়। এবারও প্রথম কোপটা পড়ল সিলেটের এক জেলা মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের কিছু এলাকায়।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, এবারও বন্যা মূলত উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে হবে।
‘বিশেষ করে যমুনা নদীর অববাহিকার পানির বৃদ্ধির ফলে জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধাসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হতে পারে।’
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্যমতে, যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরিদেক মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
সুরমা ব্যতীত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধাননদ-নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাসমূহের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। আর সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এই পূর্বাভাসের আলোকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। যেসব এলাকায় বন্যা হতে পারে, সেসব এলাকার ডিসিদেরকে (জেলা প্রশাস) দির্দেশ দেয়া আছে, কোথাও সমস্যা হলে তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে যেন রেসপন্স করে (ব্যবস্থা নেয়)।
জনতার আলো/সোমবার, ১৮ জুন ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.