জনতার আলো, স্পোর্টস রিপোর্টার: বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের মত শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের বাৎসরিক চুক্তি নিয়ে কথা বার্তা চলছেই। যদিও বোর্ড থেকে প্রথম দিনই বলে দেয়া হয়েছে, পারফরমেন্সকে মানদণ্ড ধরেই চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। গত এক বছর যাদের পারফরমেন্স ভালো ছিল না, তাদের চুক্তির বাইরে রাখা হয়েছে। যারা অন্তত দুই বা এক ফরম্যাটে জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন, তারাই চুক্তির কোটায় স্থান পেয়েছেন।
আর যারা টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি কোন ফরম্যাটেই সুযোগ পান না, তাদের জায়গা হয়নি ১০ জনে। তাই তিন ফরম্যাটের অটোমেটিক চয়েজ তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মোস্তাফিজুর রহমান আছেন চুক্তিতে। সঙ্গে দুই টেস্ট স্পেশালিষ্ট মুমিনুল হক, তাইজুল ইসলাম, ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি আর তিন ফরম্যাটেই যারা বিবেচনায় থাকেন সেই মেহেদী হাসান মিরাজ ও রুবেল হোসেনই শুধু নতুন চুক্তিতে আছেন।
দুই বাঁ-হাতি ওপেনার ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, দুই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান রুম্মন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর পেসার তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি বাদ পড়েছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ড যত বছর ধরে চুক্তি করে আসছে তার মধ্যে এবারই প্রথম এক সঙ্গে ছয়জন ক্রিকেটার চুক্তির বাইরে ছিটকে পড়লেন। প্রতি বছর কিছু সংযোজন ঘটে। আবার কাউকে বাদও দেয়া হয়। কিন্তু এক সঙ্গে এতগুলো ক্রিকেটার বাদ পড়ার ঘটনা এই প্রথম। এক সঙ্গে ছয়জন ক্রিকেটারকে চুক্তির বাইরে ঠেলে দেয়ার কারণেই শুধু নয়, আরও একটি বিশেষ কারণে এবারের চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি। কারণ এবার যে ১০ জনকে চুক্তির আওতায় রাখা হয়েছে, সেটাও আগের যে কোন বারের চেয়ে ছোট। আগে কখনই এত কম ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়নি। গড়পড়তা ১৬/১৮ এমনকি ২০/২২ জন ক্রিকেটারের সঙ্গেও চুক্তি করা হয়েছে আগে।
১০ জন প্রাথমিকভাবে চুক্তির আওতায় থাকলেও বলা হয়েছে আরও তিনজনের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। মানে এই সংখ্যা দশ থেকে বাড়িয়ে ১৩‘তে উন্নিত করা হবে। যে সভায় চুক্তি ভুক্ত ক্রিকেটারদের সংখ্যা ১৬ থেকে কমিয়ে ১০‘এ আনা হয়েছে , গত ১৮ এপ্রিল হওয়া বোর্ড পরিচালক পর্ষদের সেই সভায় নতুন করে আরও তিনজনের সাথে চুক্তি করার কথা বলা হয়েছে। সভা শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তা উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেও বলেছেন।
জানা গেছে ঐ ১০ জনের বাইরে আরও তিনজনকে চুক্তির আওতায় আনা হবে। ঐ তিন ক্রিকেটার কারা? এখন তাই রাজ্যের কৌতূহল, কোন তিনজনকে নতুন করে চুক্তির আওতায় আনা হবে? ভেতরের খবর, বোর্ড থেকে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির কাছে তিনজন ক্রিকেটারের নাম চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্রিকেট অপস তা নির্বাচকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা তিনজনের নাম চূড়ান্ত করে পাঠাবেন বোর্ডে। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচকের কাছে প্রশ্ন ছিল, কোন তিন ক্রিকেটার নতুন ভাবে চুক্তিভুক্ত হতে যাচ্ছেন। আপনারা কাদের নাম বোর্ডে পাঠাবেন, প্রধান নির্বাচকের জবাব, ‘এখনো ঠিক হয়নি। তবে আমরা ক্রিকেটার নির্বাচনের কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি।’
আজ (রোববার) সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে প্রধান নির্বাচক কারও নাম উল্লেখ না করলেও ভেতরের খবর, লিটন দাসের চুক্তির আওতায় থাকা শতভাগ নিশ্চিত। তিনজনের তালিকায় প্রথম নামটিই থাকছে লিটন দাসের। বাকি দুজনের মধ্যে একজন পেস বোলারের কথা শোনা যাচ্ছে।
বাদ পড়া ছয়জনের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে নবীন ক্রিকেটারের কোটায় চুক্তিতে রাখা হতে পারে, ক্রিকেট পাড়ায় এমন গুঞ্জনও আছে। এটাকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, না না বাদ পড়াদের কারও তিনজনের ভেতরে থাকার কোনই সম্ভাবনা নেই। আমর তার বাইরে থেকে তিনজনকে বেছে নিব।
শুধু সৌম্য, ইমরুল, সাব্বির, মোমাদ্দেক, তাসকিন ও কামরুল ইসলাম রাব্বিই নন, নান্নুর কথায় পরিষ্কার পেসার শফিউল ইসলামও বিবেচনায় নেই। তবে তার কথা বার্তায় সুস্পষ্ট ইঙ্গিত লিটন দাস থাকছেন চুক্তিতে।
এ বছর মানে ২০১৮ সালে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ যে দুটি টেস্টে অংশ নিয়েছে তার দুটিই খেলেছেন লিটন ( শ্রীলঙ্কার সাথে গত জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে)। সঙ্গে আরেকজন পেস বোলারকেও রাখা হবে। এবছর দেশের হয়ে পাঁচ ওয়ানডের একটিতেও একাদশে জায়গা না পেলেও এ সময়ের মধ্যে লাল সবুজ জার্সি গায়ে পাঁচ টি-টোয়েন্টির সবটাই খেলেছেন লিটন দাস। অন্তত দুই ফরম্যাটে জাতীয় দলে থাকা ও নিয়মিত খেলা ক্রিকেটাররা এবারের চুক্তিতে বিশেষ বিবেচনায় এসেছেন। তাদেরকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তাই টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত সদস্য বনে যাওয়া উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যানের চুক্তির আওতায় আসার সম্ভাবনা খুব বেশি। আর চুক্তির আওতায় তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে উইকেটকিপার কাম হার্ড হিটার নুরুল হাসান সোহান এবং বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল অপুও নাকি আছেন বিশেষ বিবেচনায়। তাদের দেখা গেলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
জনতার আলো/রবিবার, ২২ এপ্রিল ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.