জনতার আলো, এম এ সাজেদুল ইসলাম (সাগর), জেলা ব্যুরো চীফ, দিনাজপুর: গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে আশুড়ার বিলের ধার ঘেসে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ রোপণ এবং জাতীয় উদ্যানে পাখির হাঁড়ি লাগানোর উদ্বোধন করেন। এতে স্কাউটের সদস্যগণ সহায়তা করে।
দুই পাশে সবুজ শালবন। যা জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত। এর মাঝে আছে আশুড়ার বিল। পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক অনন্য পুরাকীর্তি সীতাকোট বিহার। যাকে ঘিরে রয়েছে সীতার বনবাসের পুরান অনেক গল্প কাহিনি। কিন্তু অবহেলায় এ দর্শনীয় স্থানের জৌলুশ এখন মলিন। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার এই হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় উদ্যান, আশুড়ার বিল এবং সীতাকোট বিহার নিয়ে এক ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নবাবগঞ্জ। এখানে পর্যটন ও বিনোদনের অনেক সম্ভবনা আছে। তবে এর সৌন্দর্য বিকশিত করতে যতটা অর্থের প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে সুষ্ঠু পরিকল্পনা। দীর্ঘদিনের অবহেলা আর সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে নবাবগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো। এ ঐতিহ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে তিনি স্থানীয় সাংসদ ও জেলা প্রশাসকের পরামর্শক্রমে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। শিগগিরই নবাবগঞ্জের জাতীয় উদ্যানসহ আশুড়ার বিল দেশের একটি অনন্য পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন
উপজেলা প্রশাসনের এ কাজে বন বিভাগ ও চরকাই বন গবেষণাকেন্দ্র সহযোগিতা করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আশুড়ার বিলের সব অবৈধ স্থাপনা ও দখল উচ্ছেদ করা হবে। সেখানে লাগানো হবে লাল শাপলা। বিলের ধার দিয়ে লাগানো হবে প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ হাজার কৃষ্ণচূড়া, জামরুল, শিমুল ও সোনালী ফুলের গাছ লাগানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে জাতীয় উদ্যানে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে পাঁচ হাজার মাটির হাঁড়ি লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া সীতাকোট রক্ষায় প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নবাবগঞ্জ অংশের ২৫১ হেক্টর এবং বিরামপুর অংশের ১০৯ হেক্টর নিয়ে মোট ৩৬০ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই আশুড়া বিল। এখানে বিভিন্ন দেশীয় মাছসহ লাল খলশে, কাকিলাসহ আট প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
২০১০ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করে চরকাই রেঞ্জের নবাবগঞ্জ উপজেলার আশুড়ার বিল শহ নবাবগঞ্জ বিটের ৫১৭.৬১ হেক্টও সংরক্ষিত বনা র নিয়ে নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারীর আট বছর পেরুলেও এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাওযা যায়নি। পলে অপূর্নতায় ভুগছে শালগাছ শহ সমূদ্ধ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান। ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর মাসে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বিরামপুর চরকাই রেঞ্জের নবাবগঞ্জ বিটের ৫১৭.৬১ হেক্টও সংরক্ষিত বনা ল নিয়ে নবাবগঞ্জে জাতীয় উদ্যানের ঘোষনা করা হয়। সংরক্ষিত বনে উদ্ভিদ, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন এবং পযর্টন সুবিধা উন্নয়নের লক্ষ্যে এ ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল। সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়,জাতীয় উদ্যান ঘোষনার পর থেকে এ পযর্ন্ত তিন বছরে এ উদ্যানে দুটি ইট সিমেন্টের তৈরী বসার বে এবং নবাবগঞ্জ বিট কার্যালয়ের সামনে একটি মাত্র দোলনা , অল্প কিছু শোভা বর্ধন কারী গাছ এবং বনের ভেতরে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতীর গাছের বাগান এ ছাড়া আর কোন কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী সংরক্ষন আইন অনুযায়ী জাতীয় উদ্যান বলতে বোঝায় মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর এলাকা যার মূখ্য উদ্দেশ্য উদ্ভিদ রক্ষা করা এবং সংরক্ষন করা।
এ ব্যপারে চরকাই রেঞ্জের কর্মকর্তা মোঃ গাজী মনিরুজ্জামান কোন বরাদ্দ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন,একটি পূণাঙ্গ জাতীয় উদ্যানে হরিন প্রজনন কেন্দ্র,নেচার হিষ্ট্রি জাদুঘর, সীমানা প্রাচীর, বিশ্রামাগার, গণ শৌচাগার, বিভিন্ন ঔষধি ও শোভা বর্ধনকারী বাগান তৈরীসহ শতাধিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরঞ্জাম, অর্থ ও জনবল থাকা দরকার। এ সবের জন্য প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকা বারাদ্দের প্রয়োজন।
জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন তুষকুটার শ্রী লিটন সরকার বলেন, সংরক্ষিত বনা ল পুরোটাই শালগাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত । এ ছাড়াও সেগুন, গামা কড়ই,জামসহ প্রায় ২৫-৩০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এছাড়াও বন বিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, কাঠ বিড়ালী, শেয়াল,বেজিসহ বিভিন্ন প্রকার বন্য প্রাণী ও পাখি দেখতে পাওয়া যায় এই বনে। আর বনের পাশেই রয়েছে এক হাজার চারশত হেক্টর আয়তনের ঐতিহাসিক আশুড়ার বিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে আশুড়ার বিলকে জাতীয় উদ্যানের অন্তর ভুক্ত করা হয় নাই।
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক থাকা কালে মরহুম আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার উদ্যোগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১৯৬৮ সালে খননের মাধ্যমে সীতাকোট বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল। বিহারটি নির্মিত হয়েছিল খ্রিষ্টীয় প ম-ষষ্ঠ শতকে। কিন্তু অযতেœ আর অবহেলায় এ অনন্য পুরাকীর্তিটি ধ্বংস হতে চলেছে। এই সীতাকোট আর আশুড়ার বিলকে ঘিরে রয়েছে পুরানো অনেক গল্প কাহিনি।
জনতার আলো/শুক্রবার, ৩১ আগস্ট ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.