জনতার আলো, এম এ সাজেদুল ইসলাম (সাগর), নবাবগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী অতিপ্রাচীন দাউদপুর হাট। কালের বিবর্তনে ,বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইজারাদারের পরিচালনায় এবং অপরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ সুষ্ঠ রক্ষনাবেক্ষনসহ নানা প্রকার জটিলতায় এক সময়ের নাম ডাক ওয়ালা এই ঐতিহ্যবাহী হাটের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
হাটের সরকারী জায়গা প্রায় ৩শতাংশ অবৈধ দখলদাররা দখলে নিয়ে পাকা দালানঘর,গোডাউন, ছোট বড় সেড তৈরী করেছে। এমনকি হাটের সরকারী জায়গা দখল করে বিক্রয় বানিজ্যে মেতে উঠেছে কতিপয় স্বার্থলোভী।
আবার অনেকেই হাটের সরকারী জায়গায় পাকা বসতবাড়ী নির্মান করে হাটের জায়গা পৈত্রিক বসত ভিটার মত অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। দাউদপুর হাটে সরকারের কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে গণ–শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার জন্য বেশ কয়েকটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল, নির্মাণ করা হয়েছিল হাটের দুষিত পানি নিষ্কাশনের জন্য নেই ড্রেন।
প্রায় ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মিত হলেও পানি নিষ্কাশন, সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলার কারনে সরকারের সব মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। হাটের বিশুদ্ধ পানির জন্য বসানো সরকারী টিউবওয়েল চুরি গেছে, গণ–শৌচাগার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে রাতা রাতি অবৈধ দখল নিয়ে সেখানে নির্মান করা হয়েছে পাকা গোডাউন,পাকা দোকান,মার্কেট।
দাউদপুর হাটের মোট সরকারী জায়গা কাগজ পত্রে শোভা পাচ্ছে। বাস্তবে দাউদপুর হাটে কোন সরকারী জায়গা আছে কি না তা, হাটের দখল পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যায়।
প্রতি বছর দাউদপুর হাট থেকে সরকার প্রায় ১৫–১৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করলেও হাটুরেদের সুখ–দুঃখের খবর কোন দিন কেউ রাখেনি। সামান্য বৃষ্টিতেই হাটু জলে পরিণত হয় হাটের বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার।
কাঁচা বাজার,মাছ বাজারের অবস্থা আরও শোচনীয় জানালেন, সিরাজ বালুয়া পাড়া গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের(জেলে) মাছ ব্যবসায়ী জেলে রূপচান।
সব্জি ব্যবসায়ী লোকমান,আবু বক্কর,আব্দুল মতিন,সিরাজুল ,শহিদুল,জাহিদুল,হাফিজুলসহ আরও অনেক সব্জি ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান,দাউদপুর হাটে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে কেনা বেচা করতে হচ্ছে আমাদের। হঠাৎ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে দোকান ফেলে রেখে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী খোলা মাঠে অথবা কোন খানে।
সীমাহীন সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে দাউদপুর হাটের চালের বাজার। চালের বাজার নিয়ে চলছে প্রভাবশালীদের চালবাজী। অবৈধ দখল বানিজ্য থামছেইনা। চাল বাজারে যাওয়া রাস্তাগুলি বন্ধ করে পাকা দোকানঘর ও গোডাউন নির্মান করেছে প্রভাবশালীরা।
দাউদপুর হাটের গরু–ছাগলের হাট গুড়িয়ে দিয়ে নির্মান করা হয়েছে বিশাল আকারের গোডাউন। ফলে গরু–ছাগলের হাট চলে গেছে ধান হাটিতে। আর ধান ক্রয়–বিক্রয় চলছে উপজেলা সদও থেকে ভাদুরিয়া যাওয়ার প্রধান পাকা রাস্তায়।
প্রতি হাট বারে রাস্তার উপর ধান ক্রয়–বিক্রয় হওয়ায় ভারী,মাঝারী যান বাহনসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচলে মারাতœক ঝুকি দেখা দিয়েছে অবস্থা দৃষ্টে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী দাউদপুর হাট।
হাটের সরকারী জায়গা অবৈধ দখলের বিষয়ে দাউদপুর ইউনিয়ন ভ’মি সহকারী(তহশীলদার) মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান,হাটের সরকারী জায়গা যারা অবৈধ দখলে রেখেছে তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, ইউনিয়ন ভ’মি সহকারী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধ দখলদারদের অবৈধ দখলে সহায়তা করেছে। তার বিরুদ্ধে হাটের সরকারী জায়গা গোপনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রয়ের একাধিক মৌখিক অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য ইউনিয়ন ভ’মি সহকারী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
দাউদপুর হাটের বর্তমান ইজারাদার মোঃ আশিকুল ইসলাম জানান, আমি হাট সরকারের কাছে উচিৎ মূল্যে নিয়েছি। হাটের সরকারী জায়গা মোট কতটুকু আমি এখনও বুঝে পাইনি। হাট চান্দিনা কতটুকু তাও আমি জানিনা।
তবে ,আমি দাউদপুর হাটের হারানো ঐতিহ্য ফিওে আনতে যত চেষ্টা করতে হয় আমি করব। ইতি মধ্যেই আমি ধান হাটি একটু ফাঁকা করেছি, সেখানে গরু–ছাগলের হাট বসাব।
তবে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিতভাবে জানাব আমাকে যেন হাটের প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ কওে দেন। আমি বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছি দাউদপুর হাটে গরু–মহিষের হাট লাগানোর জন্য।
ইতি মধ্যে গত বুধবার এলাকার সকল গরু–মহিষ ব্যবসায়ী ও এসংক্রান্ত ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা করেছি ,তারা সকলে এব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমন্ত্রিত ব্যবসায়ীরা হাটের নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করেন,তার মধ্যে হাটে জায়গা সংকটই প্রধান।
জনতার আলো/শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.