জনতার আলো, নিজস্ব প্রতিবেদক: সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মেয়ে মুক্তামনি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামে বাবা-মায়ের সামনেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় ১৩ বছর বয়সী শিশুটি। (ইন্না ইলাইহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘বুধবার সকাল পৌনে আটটার দিকে মুক্তামনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।’ বাদ জোহর পারিবারিক কবরস্থানে মুক্তামনিকে দাফন করা হবে বলে জানান তার বাবা।
বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামণিকে নিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। এরপর গত বছরের ১২ জুলাই মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
প্রথমে রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা মুক্তামনির চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢামেকের চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট মুক্তামনির হাতে প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। প্রথমে তার হাতের ফোলা অংশে অস্ত্রোপচার করে তা ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। পরে মুক্তামনির হাত আবারও ফুলে যাওয়ায়, ফোলা কমানোর জন্য হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়। এর প্রায় পাঁচ মাস পর গত ২২ ডিসেম্বর বাবা-মার সঙ্গে মুক্তামনি নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
বেশ কিছুদিন ধরে মুক্তামনির শরীর খারাপ হতে থাকে। ব্যথা আর যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত কান্না-কাটি করে সে। ডান হাতটি ফুলে যায়। দুর্গন্ধসহ হাতের ফোলা অংশ থেকে মাঝে-মধ্যে রক্ত ও সাদা পোকা বের হতে থাকে।
ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে ফোনে কথা বললে মুক্তার শারীরিক অবস্থার কথা জানান তার বাবা ইব্রাহিম। চিকিৎসক তাকে মুক্তামনির দুইটি ছবি পাঠাতে বলেন। পরে ডাক্তার শারমিন সুমির ইমোতে দুইটি ছবিও পাঠান ইব্রাহিম। ছবি দেখে তার হাতের অবস্থা খারাপ বলে জানান ডা. শারমিন সুমি।
গত বুধবার সামন্ত লাল ফোন করে মুক্তামনির খোঁজ-খবর নিয়ে রোজার পরে আবারও মুক্তামনিকে ঢাকায় নিয়ে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা জানান। কিন্তু ঢাকায় আসার আগেই কষ্টের জীবন ছেড়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় মুক্তামনি।
জনতার আলো/বুধবার, ২৩ মে ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.