জনতার আলো, মোঃ প্রান্ত পারভেজ তালুকদার : তীব্র তাপদাহে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ। এতে অসহনীয় হয়ে উঠেছে মানুষের জনজীবন। এই গরমের মধ্যেই পানি সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানী মিরপুর- ১১ এর অধিকাংশ এলাকায়। ওই এলাকায় গত মাস থেকে পানির তীব্র সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে গোসল, খাওয়া ও রান্নাসহ নিত্যব্যবহৃত কাজ স্থবির হয়ে পড়ায় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ১৫ থেকে ২০ দিন ওয়াসার পানি নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। পানি কখন আসবে সে আশায় বসে থাকলেও পানির দেখা পাচ্ছেন না, এমন কি দিন আর রাত মিলে এক ঘণ্টাও পানি পান না তারা। তাই বাধ্য হয়ে তারা খাওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে দোকান থেকে কিনছেন বিশুদ্ধ পানি। এ সমস্যা সমাধানে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি জানিয়েছেন এভিনিউ-৫, এভিনিউ-৪ সবুজ বাংলা, আদর্শনগর ও ৫৪ প্লটবাসি। গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি সংকটও তীব্র হয়েছে। পানির এমন সংকটের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলেও অভিযোগ তাদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর- ১১, ব্লক-সি, এভিনিউ-৫, এভিনিউ-৪, সবুজ বাংলা আবাসিক এলাকা ছাড়াও, আদর্শনগর ও তালতলাবস্তিসহ পল্লবীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। কেউ কেউ বাসার লাইনে পানি না পেয়ে সরাসরি যাচ্ছেন ওয়াসার পাম্পে। পাম্প থেকে কলসি, বালতি ও বোতলে ভরে বাসায় পানি আনতে দেখা যায় তাদের। পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে কখনও কখনও পাম্পের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও দুর্ব্যবহারও করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জনতার আলোকে বলেন, এর আগে কখনও পানির এমন তীব্র সংকট ছিল না। সমস্যা দেখা দিলে এক দু’দিন পর ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু গত প্রায় ২মাস ধরে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। গোসল, রান্না, কাপড়চোপড় ধোয়া কোনোটাই ঠিকমতো করা যাচ্ছে না পানির অভাবে। বাসার লাইনে পানি না থাকায় প্রতিদিন পাম্প থেকে পানি আনতে হয়। সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখছি না। কর্তৃপক্ষের উচিত অতিদ্রুত এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া।
স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘তিন দিন ধরে গোসল করতে পারছি না। আমি অসুস্থ মানুষ এক দিন গোসল করেছি মাত্র দুই মগ পানি দিয়ে।
স্থানী এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আমরা পানির বিল দেই নাকি বাতাসের বিল দেই। আমাদের অজস্র বিল আসে কিন্তু পানি আসে না।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির সরবরাহ নিয়ে অবহেলা করে আসছে।পানির জন্য হাহাকার হলেও তা সমাধানে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা।
তারা আরও জানান, যখনই গণমাধ্যম জেনে ফেলে বিষয়টা তখনি তারা একটু একটু করে পানি দেয় তাও আবার খুবই কম সময়।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, গরমকালের পানি সংকট নিরসনের জন্য গত দুই বছর আগে ৩নং ওয়ার্ড এর এভিনিউ- ৪ সবুজবাংলা আবাসিক এলাকার প্রতিটি বাড়ি থেকে মোট দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়, তারপর থেকে দুই বছর পানির আর কোন সমস্যা ছিল না। হঠাৎ করে গত ১৫ থেকে ২০ দিন হলো আবারও নতুন করে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি টাকা খরচ করার পরেও কোনো সুফল মেলেনি ভাগ্যে। বাসিন্দাদের দাবি এত টাকা ব্যয় করার পরেও কেন স্থায়ী ভাবে সমাধান হলো না??
উল্লেখ্য, ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে অধিক টাকা ইনকামের লোভে চলছে ওয়াসার পানি ব্যবসা, পানির লাইনের চাবি বন্ধ করে সেই পানি গাড়ি দিয়ে বিক্রি করছে তারা।বাসিন্দারা বলেন এক গাড়ি পানির জন্য তাদের গুনতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।তাই কর্তৃপক্ষ-জনপ্রতিনিধিদের উচিত অতিদ্রুত এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩ নাম্বার ওয়ার্ডে যথেষ্ট পানির পাম্প রয়েছে। কিন্তু ভূ-গর্ভে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পানির সরবরাহ কমে যাচ্ছে বলে জানান এসব পাম্পের পরিচালকরা।
জনতার আলো/ বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.