শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ভিডিও ধারণ করতে যাওয়ায় মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যানপ্রার্থী হাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর সমর্থকদের হামলায় অন্তত ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এঘটনায় জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গত ২১ মে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর বাড়ির নিকটবর্তী সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা প্রকাশ্যে ভোট দিতে ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করে ভোট নিচ্ছিলেন। এমন অভিযোগ পেয়ে ওইদিন সকাল ১১ টার দিকে কেন্দ্রটিতে গিয়ে ভিডিও ধারণ করেন বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, বাংলাদেশ সমাচারের প্রতিনিধি রুহুল আমিনসহ বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। এসময় মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাচ পরিহিত এক ব্যক্তি ভিডিও ধারণ করতে বাঁধা দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে অন্যান্য গণমাধ্যমের কর্মীরা তাদের ছাড়াতে গেলে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রায় ৫০ জন কর্মী দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি পলাশ খান, বাংলাদেশ সমাচারের প্রতিনিধি রুহুল আমিন, দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি আব্দুর রহিম, ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লাসহ কমপক্ষে ১০ জন গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদেরকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এঘটনার একদিন পর বুধবার (২২ মে) রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষ থেকে দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি পলাশ খান বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় আহত দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি আব্দুর রহিম বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের সহকর্মী হৃদয়সহ একাধিক গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়েছেন, এমন সংবাদ পেয়ে কেন্দ্রটিতে আমরা বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী গেলে আমাদের ওপরেও হামলা চালায় মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা। এঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি পলাশ খান জাজিরা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি, যা দুঃখজনক।
মামলার বাদী ও দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি পলাশ খান বলেন, ভোট গ্রহণের তথ্য সংগ্রহে যাওয়ায় একদল সন্ত্রাসী আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে । আমাদের বেধড়ক মারধর করে ও আমাদের সাথে থাকা মোবাইল ও ক্যামেরাসহ সকল সরঞ্জাম নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি, পুলিশ হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিষয়টি নিয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, গত ২১ তারিখ নির্বাচনের দিন পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় পলাশ খান নামে এক গণমাধ্যমকর্মী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এজহারে উল্লেখিত আসামীসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।