জনতার আলো, নিজস্ব প্রতিবেদক: বংশীবাদক রাজার দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে রাজার স্মৃতি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে রাজার বড় ছেলে মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, আমার বাবাকে দেখলে মনে হতো সাক্ষাৎ নবাবা সিরাজ-উদ দৌলা। রাজার পোশাক পরে হাতে লম্বা এক বাঁশি নিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম কিংবা বাংলা একাডেমির মেলা চত্বরে ভাষা শহীদদের ভাস্কর্যের সামনের দাঁড়িয়ে আপন মনে বছরের পর বছর বাঁশি বাজিয়ে আনন্দ দিয়ে গেছেন মানুসকে। তার বাশির সুরে মাতোয়ারা হয়ে উঠত স্টেডিয়াম থেকে বইমেলার প্রাঙ্গণ।
বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমী ও বইপ্রেমীরা এমন দৃশ্য আর দেখবে না। রাজার পোশাক পরে বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়া সেই বংশীবাদক রাজা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খান আর নেই। লিভার, ডায়াবেটিসসহ নানা সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী থাকার পর অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী দিনে না ফেরার দেশে চলে যান এই মুক্তিযোদ্ধা ও বংশীবাদক।
অসুস্থ অবস্থায় কেউ খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছে বংশীবাদক রাজার পরিবার। তার বড় ছেলে মোহাম্মদ জুয়েল জানান, গত বছর বাবার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)’র কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু বিসিবি সেই সাহায্য তো করেইনি, এমনকি শয্যাশায়ী থাকাকালে রাজার সঙ্গে দেখা করতেও যায়নি দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটির কেউ।
বিসিবির কাছে লিখিত আবেদন করে সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা সাড়া দেননি। শুধু বিসিবিই না, চ্যানেল আইয়ের হয়েও এত প্রোগ্রাম করল আমার বাবা। তারাও কোনো সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না।’
‘মৃত্যুর আগে বাবার চাওয়া ছিল। টাকা না দিত, অন্তত্য অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখে যেত। কিন্তু বাবার সেই চাওয়াও পূরণ হয়নি। আক্ষেপ নিয়েই চলে গেলেন বাবা। ক্রিকেটার রুবেল, তামিম বলেছিলেন বাবাকে দেখা করতে। কিন্তু তাদের সঙ্গে দেখা করার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। ওপারে তিনি যিনি ভালো থাকেন। বংশীবাদক রাজা মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরে আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বে হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেননি তিনি। ‘আমার বাবা ১৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।
কিন্তু তিনি কখনো সার্টিফিকেট নেননি। তার কথা ছিল, দেশের জন্য যুদ্ধ করছি, তার জন্য আবার সার্টিফিকেট/টাকা-এসব নেব কেন? আমার বাবা বলতেন, যেখানে গ্রামের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করেও সার্টিফিকেট পেয়েছে, সেখানে এই জিনিস না হলেও চলবে। তবে ইদানীং যখন আমরা বলতাম, এই সার্টিফিকেট পেলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে, তখন বাবা বলতেন, সার্টিফিকেট না নেওয়াটা ভুল ছিল।’
রাজা ঢাকার পল্লবী এলাকার আদর্শনগরের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার ঠোটাপাড়া গ্রামে। আলাউদ্দিন খান বাঁশি বাজানো শিখেছেন বিখ্যাত বংশীবাদক আবদুর রহমানের কাছে। একুশে ফ্রেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস ও ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দিনসহ রাষ্ট্রীয় বিশেষ অনুষ্ঠানে হাজির হতেন তিনি। আর মনে করিয়ে দিতেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে।
দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেট প্রেমী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক মোঃ আমিনুল ইসলাম বুলু, শরীয়তপুর ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মোঃ বাচ্চু বেপারী, জনস্বর্থে বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মামুন হোসেন, বিকল্প যুব ধারার কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল হোসেন ও মাসুদ সিদ্দিকী মাল প্রমুখ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.