ঢাকা, শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোলাপগঞ্জে আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলাকারী ও উস্কানিদাতা কে সেই আওয়ামীলীগ নেত্রী লাকি

জনতার আলো, স্টাফ রিপোর্টার:

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট, ২০২৪, ০৬:৩৩ পিএম

গোলাপগঞ্জে আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলাকারী ও উস্কানিদাতা কে সেই আওয়ামীলীগ নেত্রী লাকি

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিলেটের গোলাপগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ছয় জন নিহত হয়ে ছিলেন। আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, পথচারী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। যারা নিহত হয়েছেন ওই আন্দোলনে তাদের পরিবার এখন বাকরুদ্ধ আপনজনকে হারিয়ে।

রোববার (৪ আগস্ট) আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

পুলিশের গুলিতে নিহতরা হলেন, উপজেলার বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪০), ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের গৌছ উদ্দিন (৩৫), শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (২২), দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ (২০), দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৩) ও একই উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম।

কিন্ত সরকার পতনের পর সময় যত গড়াচ্ছে ততই রহস্যের ধানা ধ্রু¤্র জাল হিসেবে দেখা যাচ্ছে, নিহত পরিবারের কাছে এখনও অদৃশ্যে রয়ে গেছে, কার গুলিতে তরুণ ৬টি প্রাণ অসময়ে ঝরে গেলো। বৈষম্য বিরোধী শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে হঠাৎ ছাত্রলীগ হামলা করে রণক্ষেত্রে পরিস্থিতি হয়ে উঠে ছিলো ঢাকা দক্ষিণ এলাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জানায় লাকি আক্তার ওরফে লাকি আহমেদ সিলেটের চিত্র নামে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে বার বার ছাত্রলীগ মাটে নেই বলে উস্কানি দিতে থাকেন, কখনও সিলেটে শহরের পরিস্থিতি কথাও বলতে থাকেন ছাত্রলীগদের নিয়ে, এর কিছুক্ষণ পর সিলেট মেন্দিভাগ গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আলিম রানা স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় এবং গুলি চুড়তে থাকে প্রকাশ্যে ছাত্রদের উপর। ছাত্রলীগ নেতাদের আধিপত্য বিস্তার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ও বিজিবি তাদের সাথে যোগ দেয়। ওই সময় ঘটনাস্থলে নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম নিহত হন।

সুত্রে জানা যায়, লাকি আহমেদ সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাংগঠিক সম্পাদিকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সব সময় বিরোধীতা করতেন। শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর ক্ষমতা যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দখলে চলে আসে, তখনই সেই লাকি আহমেদ ও ছাত্রলীগ নেতা রানা নিজের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিক হিসেবে নিজে জাহির করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পক্ষে কথা বলতে থাকেন এবং নিজেরদের  ফেসবুক পেইজ  থেকে গুণগান গাইতে থাকেন। সরকার পতনের পালের হাওয়ার পরিবর্তনে দেখে, ঘটনার দিন রাতেই ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভটি ডিলেট করে দেন। তাহলে এখন নিহত পরিবারের প্রশ্ন ওই ৬টি প্রাণ কাদের গুলিতে আহত হয়েছেন এ প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে সচেতন মহলের নিকট।

পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার সংবাদ চারদিকে চাউর হলে স্থানীয়রা পুলিশও বিজিবিকে ধাওয়া করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।

এদিকে ওই দিন সকাল থেকে সমগ্র গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ছাত্র আন্দোলনে বিজিবির গাড়ি ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পুলিশ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ বাজার, বারকোট এলাকায় হাসপাতাল সংলগ্ন ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরে রবার বুলেট ও গুলি ছুড়লে প্রায় ২ শতাধীক শিক্ষার্থী, পথচারী, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আহত হয়েছেন। পুলিশের সাথে সরাসরি ছাত্রলীগ নেতা রানা গ্রুপের নেতাকর্মীরা ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা গুলি ছুঁড়তে দেখেন বলে স্থানীয়রা জানান। ওই সময় গুলিবৃদ্ধ আহতদের উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের সকলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এদিকে তাজ উদ্দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ায় এলাকাবাসী তার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে গোলাপগঞ্জ থানা ঘেরাও করেন।

এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা হাসপাতালের সম্মুখে স্থানীয় জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে উপজেলার সিলেট- গোলাপগঞ্জ-ঢাকা দক্ষিণ সড়ক অবরোধ করে পুলিশ ও বিজিবিকে ধাওয়া করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন সহ নাজমুল এ দুই জন নিহত হন। আহত হন অনেকেই। এতে করে সমগ্র উপজেলা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো সে সময়। শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় সাধারণ মানুষ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন।