জনতার আলো, স্পোর্টস রিপোর্টার: নিজেকে প্রমাণ করার জন্য বিশ্বকাপের চেয়ে বড় মঞ্চ আর কোন কিছুই হতে পারে না। চার বছর পর পর আসে বিশ্বকাপ। আর সেই বিশ্বকাপকেই ফুটবলাররা বেছে নেন তাদের প্রমাণের জন্য। পরীক্ষিত খেলোয়াড়রা যেমন নিজেদের সেরাটা দেখাতে আসেন, তেমনি এখান থেকেই জন্ম নেয় পরবর্তী বড় তারকা।
পায়ের জাদু, খেলার মাঠে নিজের দ্যুতি ছড়িয়েই অনেকে এখানে জানান দিয়ে যান নিজের আগমনী বার্তা। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপেও দেখা মিলেছে এমন কিছু উদীয়মান ফুটবলারের। যারা কি না আগামী দিনে শাসন করবেন ফুটবল বিশ্ব।
পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল এমন পাঁচজনকে, যারা রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
কাইলিয়ান এমবাপে এ তালিকায় নিশ্চিতভাবে সবার আগে জায়গা করে নিয়েছেন ফ্রান্সের অন্যতম সেরা তারকা কাইলিয়ান এমবাপে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ জয়! চাট্টিখানি কথা নয়। নিজের আগমনী বার্তা আগেই ঘোষণা করেছিলেন এই বিস্ময় তরুণ। এবার সেই বার্তা বিশ্বকাপ থেকে ছড়িয়ে দিলেন আরও অনেক বেশি। বিশ্বকাপের সমস্ত আলোটুকু কেড়ে নিয়েছেন এ স্ট্রাইকার।
দুর্দান্ত পায়ের কাজ, অবিশ্বাস্য রকমের গতি দিয়ে ইতিমধ্যেই বড় বড় দলকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন ক্লাব পর্যায়ে পিএসজি’র হয়ে। বিশ্বকাপে এসেও সেই জাদু অব্যাহত রাখলেন। শেষ ষোলয় মেসির আর্জেন্টিনাকে তো একাই বিদায় করে দিয়েছেন এমবাপে। দলকে পাইয়ে দিয়েছিলেন একটি পেনাল্টি, করেছেন দেখার মত দুটি গোল।
ইতিমধ্যেই নেইমারের পর সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের খেতাব জয় করে নিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের পর বাকি সময়টুকু যে এই ফ্রেঞ্চম্যানের ফুটবল জাদুতে বুঁদ হবে ফুটবল বিশ্ব, তা আর নিশ্চয়ই বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
বেঞ্জামিন পাভার্দ ক্লাব পর্যায়ে স্টুটগার্টের হয়ে খেলা বেঞ্জামিন পাভার্দ যেন এ বিশ্বকাপের নতুন আবিষ্কার করা একটি হীরার টুকরা। তরুণ খেলোয়াড় হয়েও নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন ফ্রান্স দলের তারকাবহুল একাদশে। নকআউট পর্বের শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে করেছেন দারুণ এক গোল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আর্জেন্টিনার কাছে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক ভলিতে তার করা গোলেই সমতায় ফেরে লেস ব্লুজরা।
যা কিনা ১৯৯৮ এর লিলিয়াম থুরামের পর প্রথম কোন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার হিসেবে বিশ্বকাপ গোল। ইতিমধ্যেই ক্লাব দলগুলোর মাঝেও দারুণ সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই ফুলব্যাক। ম্যানচেস্টার সিটি, টটেনহ্যাম হটস্পার আর বায়ার্ন মিউনিখও ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন পাভার্দের এজেন্টের সাথে।
আলেকজান্ডার গলোভিন স্বাগতিক রাশিয়ার নতুন আবিষ্কার এই গলোভিন। সৌদি আরবের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচেই নিজের নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই করেছেন দুটি অ্যাসিস্ট। সাথে ফ্রি-কিক থেকে একটি গোল।
আর বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত রাশিয়ার স্বপ্ন যাত্রায় অগ্রণী ভূমিকাও পালন করেছেন গলোভিন। অসাধারণ বল কন্ট্রোলের অধিকারী গলোভিনকে পেতে ইতিমধ্যেই ওঁত পেতে আছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আর্সেনাল এবং চেলসি।
হার্ভিং লোজানো মেক্সিকান ক্লাব পাচুয়া থেকে আটলান্টায় নাম লিখিয়েই যেন নিজের ক্যারিয়ারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেলেন হার্ভিং লোজানো। বিশ্বকাপে করেছেন ২০১০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী গোল। ছিল দক্ষিণ করিয়ার বিপক্ষে গোলে সহয়তা। এবারের বিশ্বকাপে মেক্সিকান দলের আক্রমণভাগের অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি। দুর্দান্ত গতি আর পাস দেওয়া দক্ষতায় নজর কেড়েছেন সবার। হয়তো এবারেই ডাক পেয়ে যেতে পারেন বিশ্বের বড় যে কোনো ক্লাবে।
জর্ডান পিকফোর্ড নতুন সাড়া জাগানো খেলোয়াড়ডের মধ্যে একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন ইংল্যান্ড গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। জো হার্টকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ দল গঠন করার পর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। কিন্তু তার মুখ রক্ষা করেছেন পিকফোর্ড।
বিশ্বকাপে ইংলিশডের হয়ে রেকর্ড ১৫টি সেভ করেছেন। এছাড়াও কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার সাথে টাইব্রেকারে তার দুর্দান্ত সেভগুলোই তো সেমিতে তুললো ইংলিশদের। তাই বিশ্বকাপ যে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের জন্ম দেয় তার প্রমাণ হয়ে রইলেন জর্ডান পিকফোর্ড।
জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.