জনতার আলো, নাটোর জেলা প্রতিনিধি : বিভিন্ন বিড়ি ও সিগারেট কোম্পানীর পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের, মুনাফাটাও বেশী, তাই নাটোরে আশঙ্কাজনক হারে দিনদিন তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধান চাষের ভরা মওসুমে উর্বর ধানি এবং তিন ফসলি আবাদী জমিতে কৃষকরা তামাক চাষ করছেন।
তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সরকারী বিধি নিষেধ থাকার পরেও ফসলি জমিতে খাদ্য শষ্য বাদ দিয়ে ক্ষতিকর তামাক চাষ করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে রোগব্যাধি বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক তামাক চাষ বন্ধ করে দিলেও গত দুই বছর ধরে কিছু কিছু চাষী কম সময়ে বেশি মুনাফার লোভে আবারও তামাক চাষে ঝুঁকে পরছেন। নিজস্ব জমির পাশাপাশি অন্যের জমি লীজ নিয়ে স্বল্প আয়ের কৃষকরা অতি লাভের আশায় তামাক চাষ করছেন।
তামাক চাষ থেকে বিরত থাকা অনেক চাষী বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তামাকের চারা রোপণ করে সামান্য পরিচর্যা করলে পরিপক্ক তামাক উৎপাদন করা যায়। এতে বেশ ভালো আয়ও করা যায় কিন্তু তামাকপাতা যখন পরিপক্ক হয় তখন তা তুলে বাড়িতে রাখতে হয় আর সে সময় শুকনো তামাকের গন্ধে বাড়ির সুস্থ্য মানুষ-জনমানুষ অসুস্থ্য হয়ে পরেন। এছাড়াও তামাকের গন্ধে ক্যান্সার সহ অনেক ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তামাক চাষীর বাড়ির শিশু ও নারীরা তামাক পাতা শুকানোর কাজ করে বলে তাদেরই ঐ সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশী থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে লালপুর উপজেলার কাশিমপুর, মাঝগ্রাম, দুয়ারিয়া, বিলমাড়িয়া, নওদাপাড়া, দুড়দুড়িয়া এলাকার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায় সেখানে ব্যপক হারে তামাক চাষ করা হচ্ছে। এসময় কাশিমপুর গ্রামের তামাক চাষী আইরুল সরকার বলেন, তামাক চাষে কম সময় ও খরচে অধিক লাভ হয়। আমি এ বছর সাত বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। নওদাপাড়া গ্রামের শাহিন তিনবিঘা ও মুজদার চার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তারা বলেন, পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম উপজেলার গড়মাটিতে সহজেই তামাক বিক্রি করা যায়। গড়মাটি এলাকার বেশীরভাগ কৃষক তামাক চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আর সে কারণেই আমরা তামাকের চাষ করছি।
এ বিষয়ে লালপুর উপজলা কৃষি অফিসার হাবিবুর ইসলাম খান বলেন, লালপুরে আগে তেমন একটা তামাক চাষ হতো না। এখন প্রতি বছর প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন বিড়ি-সিগারেট কোম্পানির উৎসাহেই কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হয়েছেন। কোম্পানীর লোকজন তামাক চাষের জন্য কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান কওে থাকে এবং তামাক চাষের পর চড়া দামে তা কিনেও নেয়। এসব কারণেই সাধারণ কৃষকেরা বেশী আশায় উর্বর ধানি জমিতেও তামাকের চাষ করে জমির উর্বরতা নষ্ট করছেন। আমরা সব সময় প্রতিটি এলাকায় তামাক চাষ না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। একই সাথে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও সবাইকে অবহিত করছি।
জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ০৮ মার্চ ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.