জনতার আলো, অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক : কৃষকের ঘরে নতুন চাল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তি এসেছে বাজারে। কমেছে চালের দাম। বাজারে নতুন চাল পুরোপুরি উঠলে দাম আরও কমে আসবে বলে জানাচ্ছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।
দাম কমায় স্বস্তিতে ক্রেতারাও। তবে কেনা দামের চেয়ে বিক্রির দামে তারতম্য হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা কমেছে বিভিন্ন ধরনের মোটা ও চিকন চালের দাম। রাজধানীর পাইকারি চালের বাজার কারওয়ানবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে দেখা গেছে, আসতে শুরু করেছে নতুন চাল।
বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই-তিন মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে চালের দাম। কিছুদিন আগেও ৫৮-৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। কেজিপ্রতি ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণা, পাইজাম, আটাশ, গুটিসহ মোটা জাতের চাল।
খুচরা বাজারেও কমেছে চালের দাম। তবে, এখনো পাইকারি বাজারের সঙ্গে পার্থক্য অনেক। পাইকারি বাজারে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে মিনিকেট চাল বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়। ৪০ টাকার কমে মিলছে না মোটা চালও।
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ বাজারে খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি হয় চাল। তবে কৃষি মার্কেট খুচরা বাজারের চালের দরের চেয়ে এ বাজারের পাইকারি দর বেশি। চালের দাম কমার প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি স্থানীয় মুদিও দোকান ও খুচরা দোকানেও।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের তিতাস এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল মতিন ঢাকা বলেন, ‘চালের দাম কম। গত তিন-চার মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে চালের দাম কমছে। নতুন চাল কিছু কিছু আসছে। পুরোপুরি নতুন চাল বাজারে এলে দাম আরও কমে যাবে।’
একই বাজারের পাইকারি চালের আড়ৎ ‘মেসার্স বিলচাঁন্দক রাইস এজেন্সি’র বিক্রেতা আনিছ বলেন, ‘চালের দাম কমায় কিছুটা ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হলে কারও কিছু যায় আসে না। এটা নিয়ে কারও মাথাব্যথাও নেই। আমাদের ক্ষতিপূরণ কেউ দেয় না। কেউ জানতেও চায় না।’
তবে চালের দাম কমায় স্বস্তিতে আছেন সাধারণ মানুষ। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্রদের জন্য সুখবর বয়ে এসেছে।
ক্রেতা ইউনূস বলেন, ‘চালের দাম কম থাকুক এটা তাদের সারা বছরের প্রত্যাশা। সামান্য আয় দিয়ে বেশি দামের চাল কিনতে বিপাকে পড়তে হয়।’ পেশায় প্রাইভেট কারচালক ইউনূস বলেন, ‘আমি যার গাড়ি চালাই, তারা খান নাজিরশাইল। আমরা তো আর দামি চাইল খাইতে পারি না, আমরা খাই পাইজাম।’
‘মোটা চাইল খাওয়ার পরও টানাটানি লাগে। ৪০ টাকা, ৪৫ টাকা কেজি থাকে। এই দামে চাইল কিনা আমগো পোষায়?’
ক্রেতা দিদার বলেন, ‘চালসহ সব পণ্যের দাম কম থাকবে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা এটাই আশা করি। কিন্তু বছরের অন্য সময় এই চাল কিনতেই ঝামেলা হয়। সরকারের উচিত, এই দিকটা দেখা।’
রাজধানীতে চাল আসার অন্যতম উৎস রাজশাহী জেলা। সেখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেন, নতুন চাল বাজারে আসায় তারা হতাশ। কেননা নতুন চালের কারণে দাম কমে গেছে পুরনো চালের। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে এসব ব্যবসায়ীদের।
রাজশাহীর একজন পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে নতুন চালের বাজারে আমরা হতাশ। প্রায় প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে। আগের কেনা পুরনো চাল কেজিপ্রতি ৩৬-৩৭ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কারণ নতুন চালের বাজার মূল্য নিম্নগতি কেজিপ্রতি মাত্র ২৫-২৬ টাকা ধরে বিক্রি হওয়ায় সবাই নতুন চাল কিনছে।’
একই তথ্য জানিয়েছেন আব্দুল বাছের, রফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা জানান, নতুন চালের মূল্য এমন নিম্নগামী থাকলে কৃষক ব্যবসায়ী উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জনতার আলো/শনিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.