জনতার আলো, অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক : ব্যাংকিং খাতে কিছু সমস্যা থাকলেও সার্বিকভাবে এই খাতটির অবস্থান ভালো বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই খাতটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বক্তব্য উপস্থাপনের আগে তার ৮৫তম জন্মবার্ষিকীর কেক কাটেন। গত ২৫ জানুয়ারি তার জন্মদিন ছিল।
এরপর দেয়া বক্তব্যে ব্যাংকিং খাত নিয়ে নানা কথা বলার পাশাপাশি নির্বাচনের বছরে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকারও তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘২০১৮ নির্বাচনের বছর। এই বছর নির্বাচনের আগে কালো টাকার বেশ ছড়াছড়ি হবে। তাই আমাদের ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
ব্যাংকগুলাতে আমানতের তুলনায় ঋণ অনুপাত বেশি হয়ে গেছে উল্লেখ করে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো সতর্ক হওয়ারও তাগাদা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
গত কয়েক বছর ধরেই ঋণ কেলেঙ্কারি, খেলাপি ঋণ ইস্যুতে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে লাইসেন্স দেয়া ফার্মার্স ব্যাংক তার আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। আবার সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকও ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত। ভুয়া ও বেনামি ঋণ আদৌ আদায় হবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ আছে।
তবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। মোটামুটি ভালো। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবপর হতো না যদি না ব্যাংকিং খাত দুর্বল থাকত।’
‘অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ উল্লেখযোগ্য ভালো হয়েছে। সেখানে ব্যাংকিং খাতের অবশ্যই উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।’
মুহিত বলেন, ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকেই নানা প্রশ্ন করে থাকেন। এবং তারা বলে থাকেন ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুব দুর্বল। তারা ভুলে যান আমরা কী অবস্থা থেকে দেশ পরিচালনা শুরু করেছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ডিফল্ট (খেলাপি ঋণ)। প্রায় অর্ধেকের বেশি ডিফল্ট ছিল। সেখান থেকে এখন গড়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ১১ শতাংশের মতো হবে। এছাড়াও আরো অনেক অসুবিধা ছিল ব্যাংকিং সেক্টরে। সেগুলো কাটিয়ে আস্তে আস্তে ব্যাংকিং খাত প্রসার লাভ করছে।’
মূলধন সংকটে পড়া রূপালী, বেসিক ব্যাংকের জন্য অর্থ বরাদ্দের বিষয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সরকার জনগণের করের টাকা এভাবে ব্যাংককে দিতে পারে না।
অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, ‘অনেকেই মন্তব্য করেছেন বাজেটের টাকা, মানুষের টাকা সেটা দিচ্ছেন আপনি ব্যাংকিং খাতে। এটা ঠিক না। কারণ ব্যাংকিং খাতে কোনো একটি বিপর্যয় আমরা হতে দিতে পারি না।’
‘ব্যাংকিং খাতের সামান্যতম একটি বিপর্যয় পুরো খাতকেই ধ্বংস করে দেবে। এই যন্ত্রণা কোনো সরকার সহ্য করতে পারে না। সুতরাং সরকার এটি করবেই।’
এর আগে সভাপতির বক্তব্যে রূপালী ব্যাংকের সিইও আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘রূপালী ব্যাংক আজ নানাভাবে অবহেলিত। পূর্বে রূপালী ব্যাংকে অযোগ্য লোক ঢুকিয়ে ব্যাংককে আর্থিকভাবে নষ্ট করে দিয়েছিল। এ ছাড়াও নানা কারণে এই রূপালী অনেকাংশে পিছিয়ে গিয়েছিল। এখনও অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় রূপালী ব্যাংক পিছিয়ে থাকলেও আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করে আতাউর রহমান বলেন, ‘আপনি আমাকে সামনের বাজেটে অন্তত ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দিন। আমরা টাকার অভাবে ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি করতে পারছি না। এই টাকা যদি আপনি আমাদের দেন আমরা আর আপনার কাছে টাকার জন্য হাত পাতব না। আমি কথা দিচ্ছি সবার সামনে।
জনতার আলো/রবিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.