মান্দায় গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা


জনতার আলো প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৩, ২০২৩, ১:২৩ অপরাহ্ন /
মান্দায় গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা

জনতার আলো, মাহবুবুজ্জামান সেতু, জেলা ব্যুরো চীফ, নওগাঁ : গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ও সংঘাতের পর থেকে ব্যাপক গ্রেফতার ও নাশকতা মামলায় জর্জরিত বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা । প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আটক করছে থানা পুলিশ। এমন প্রেক্ষাপটে সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাজ করছে। ঢাকায় পুলিশ হত্যা ও নাশকতা মামলা এবং পরবর্তীকালে অবরোধ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে একাধিক নাশকতা মামলা হওয়ায় নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান সরকারের পরিকল্পিত একটি ক্র্যাকডাউন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা -কর্মীরা জানান, গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকার সমাবেশে সহিংসতার পর থেকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে আর বাড়িতে থাকতে পারছেন না। গ্রেপ্তার এড়াতে রাতে নিরাপদ জায়গায় থাকার চেষ্টা করছেন তারা । তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও কোন এক সময় অথবা বর্তমানে দলীয় পদে থাকা এবং পুলিশের তৎপরতা দেখে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন বলেও জানান তারা ।

এ পর্যন্ত নওগাঁ সদর থানায় ৯০ এর অধিক নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও নওগাঁ জেলা জুড়ে প্রায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী আটক হয়ে জেলে আছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে নওগাঁর মান্দা উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের প্রায় ২০ জনেরও অধিক নেতা-কর্মী মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন নাশকতা মামলায় আটক হয়েছেন।
আর বর্তমানে যারা বাইরে আছেন তারাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে কেউ বাড়ি ঘরে থাকতে পারছেন না। তাদের দাবি যে, প্রতিনিয়ত তাদেরকে বাড়ির বাইরে থাকতে হচ্ছে। সারা দেশের বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা নাশকতার মামলায় জড়িয়ে যেভাবে জেলে পাঠানো হচ্ছে এবং হয়রানি করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় নওগাঁর মান্দা উপজেলাতে এটা অনেকাংশেই বেশি ।

ঢাকাসহ সারাদেশে মামলা এবং পুলিশের অভিযানে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

তবে পুলিশ বলছে, ২৮শে অক্টোবর পুলিশ হত্যা ও সহিংসতা এবং অবরোধে সহিংসতার কারণে অভিযান অব্যাহত রয়েছে । ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর তথ্য অনুযায়ী গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ১১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার ৭শ জনের মতো।

অন্যদিকে বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দাবি করছেন, এ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৬শ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার এবং এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।এসব মামলা বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা হচ্ছে। মামলার এজাহারে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের অধিকাংশ স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে আসামী করা হচ্ছে।

এতে বিশেষ আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিতে না পারেন। তার মানে হলো, যখন একজন আটক হচ্ছেন, তখন সে আর জামিন পাচ্ছে না। কারণ আইনেই বলা আছে যে এসব মামলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর কোনো এখতিয়ার নেই জামিন দেয়ার। প্রতিনিয়ত হয়রানী করতে একের পর এক বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে এবং অজ্ঞাতনামা আসামীদের আটক করা হচ্ছে, সেটি নি:সন্দেহে উদ্বেগজনক।

গত ২৮শে অক্টোবরের পর অনেকটা ঘোষণা দিয়েই সরকার এখন বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছে। বিএনপিও হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচী দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, আমরা কাউকে অযথা হয়রানী করতে চাই না । বরং নাশকতা মামলায় এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামীদের আটকের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩/শোভন