জনতার আলো, মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় টুলে অথবা পিরায় বসে নাপিতের চুল কাঁটার দৃশ্য আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এমন দৃশ্য চোখে পড়লেও আজ তা অতীত স্মৃতির মতো মনে হয় ।
ডিজিটাল বাংলাদেশে আজও জেলার মান্দা উপজেলার সতীহাট গ্রোয়ার্স মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার পাশে পয়োনিষ্কাশন ড্রেনের উপর প্রতি মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং মাছ বাজরের পার্শ্বে শুক্রবার সহ সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখনো কয়েকজন নাপিত সেই বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন কোনমতে।
শহর অ লে যেখানে চাকচিক্যময় সেলুনের দোকানে শহরবাসী ভীর জমায়। চুলদারী কাটতে ব্যস্ত থাকে ঠিক সেই মূহুর্তে গ্রামীন পরিবেশে খোলাবাতাসে একেবারেই উন্মুক্ত পরিবেশে নিজস্ব প্রযুক্তিতে কাঠ অথবা বাঁশের তৈরী করা পিরা অথবা টুলে বসে গনেশপুর গ্রামের নাপিত মৃত আকালু চন্দ্র শীলের তিন পুত্র নিমাই চন্দ্র শীল, নিরাঞ্জন চন্দ্র শীল এবং নিতাই চন্দ্র শীল চুল কেটে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
কাজের ফাঁকে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে আমরা চুল-দাড়ি কেঁটে জীবিকা নির্বাহ করি, এ পেশায় উপার্জিত অর্থেই সংসার জীবনে আমরা ভালো আছি। চুল দাড়ি কাটাতে মোট টাকা লাগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা মাত্র।
যেখানে শহরে সেলুনগুলোতে তাদের নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা রয়েছে এবং অনেক সময় চুল দাড়ি কাটাতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাগে। গণেশপুর গ্রামের নাপিত ধীরেন চন্দ্র শীল এবং বীরেন চন্দ্র শীল উভয়ে জানান, একসময় আমরা বাড়িতে গিয়ে টাকা অথবা চালের বিনিময়ে চুল-দাড়ি কাটিয়ে দিতাম।
এখন আর বাড়িতে গিয়ে চুল কাটিয়ে দিতে হয় না; বরং তারাই বাজারে এসে চুল-দাড়ি কাটিয়ে যায়। তবে বিভিন্ন এলাকায় এখনও ছোট বাচ্চা, বয়োবৃদ্ধ এবং অসুস্থ্য ব্যক্তিদের অনেক সময় বাড়িতে গিয়ে চুল-দাড়ি কাটিয়ে দিতে হয়।
বর্তমান সময়েও বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের মাধ্যমে নাপিতরা তাদের বাড়িতে গিয়ে চুল-দাড়ি কাটিয়ে দিয়ে আসেন। সেইদিনগুলি আজ শুধুই স্মৃতি, একসময় এ নাপিতদেরকে বলা হত “নর-সুন্দর”।
আজ সে নাম দাড়িয়েছে হেয়ার কাটিং সেলুন। নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারগুলোতে নাপিতরা এখন পর্যন্ত কোন মতে এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
জনতার আলো/শুক্রবার, ০৪ মে ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.