জনতার আলো, মাহবুবুজ্জামান সেতু, জেলা ব্যুরো চীফ, নওগাঁ : নওগাঁর মান্দায় এস সি মডেল পাইলট স্কুল ও কলেজে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের পরিপত্র উপেক্ষা করে জ্যৈষ্ঠ শিক্ষক শাহজাহান আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে জুনিয়র শিক্ষক রুস্তম আলীকে জ্যৈষ্ঠ শিক্ষক বানিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব দিয়ে স্কুল গর্ভনিং বডির সভাপতি অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জ্যৈষ্ঠ সহকারী শিক্ষক শাহজাহান আলী গত ৮ নভেম্বর নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জ্যৈষ্ঠ সহকারী শিক্ষক শাহজাহান আলী ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) দ্বায়িত্বভারের দাবিদার হলেও ৩য় জ্যৈষ্ঠ রুস্তম আলীকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে প্রধানের দ্বায়িত্বে বসিয়ে নিয়োগের ধু¤্রজাল সৃষ্টি করছে বলে শাহজাহান আলী জানান।
এদিকে জ্যৈষ্ঠ সহকারী শিক্ষক শাহজাহান আলীকে অন্যায়ভাবে কোনরকম নোটিশ ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত করলে তিনি আদালতের শরনাপন্ন হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নং-১৬০/২০১৮। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই অন্তে বৈধতা থাকায় মহামান্য আদালত তাকে পূর্বের ন্যায় প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আদেশ প্রদান করলেও গর্ভনিং বডির সভাপতির ইন্ধনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর এবং ক্লাস করতে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতেছেন বলে জানা গেছে।
চেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্বের কারনে গত তিন বছর থেকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিনে চেয়ার দখল নিয়ে নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চেয়ারকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে নানান তালবাহনা করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। সমস্যা সমাধান করে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী সচেতন অভিভাবকদের।
জানা গেছে, গত ২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রধান শিক্ষক ও ডিসেম্বরে সহকারী প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেন। পরিপত্র অনুযায়ী একই সালের ৩১ ডিসেম্বরে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে অত্র প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার সিনিয়র শিক্ষক সমরেশ মজুমদারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৪/০৭/২০১৫ ইং তারিখে তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যহতি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে বিদ্যালয় শাখার দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ গোলাম মোস্তফা মোহা: নুরুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ৩০/০৯/২০১৫ ইং তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে আবারও দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ গোলাম মোস্তফা মোহা: নুরুজ্জামানকে অপসারণ করা হয়। ওই তারিখে কারিগরি শাখার তিনজন জ্যেষ্ঠকে বাদ দিয়ে জুনিয়র ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মো:রোস্তম আলীকে ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) এর দায়িত্বভার অর্পন করা হয়। এতেই শুরু হয় নানান জটিলতা, ভেঙ্গে পরেছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজসে পরিপত্র পরিপন্থীর নিয়ম বর্হিভূত ভাবে জুনিয়রকে দায়িত্বভার অর্পন করার কারনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৯/০১/২০১৬ ইং তারিখে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড থেকে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি পত্র প্রেরন করা হয়। সেখানে সমরেশ মজুমদারের অব্যহতি পরবর্তী জ্যেষ্ঠকে নিয়োগ প্রদানের জন্য বলা হয়। সে মোতাবেক কারিগরি শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক শাহজাহান আলী মৃধা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দাবীদার বলে জানা গেছে। অপরদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষক নাই। শরীর চর্চা শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত অ্যাসেম্বলী সহ জাতীয় সঙ্গিত হয়না। মোট কথা শিক্ষক স্বল্পতা ও চেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতিকুর রহমান মিঠু বলেন, ২০১৪ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন ভাবে চলছিল। দুইটি অ্যাডহক কমিটির পর বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ কিমিটি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ, দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি।
সহকারী শিক্ষক শাহজাহান আলী মৃধা বলেন, বিষয়টি নিয়ে বারবার সভাপতিকে অবহিত করলেও তিনি কোনরুপ পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বিধি বর্হিভূত ভাবে তিনি জুনিয়রকে ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) এর দায়িত্ব দিয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) মো: রোস্তম আলী বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটি অদ্যবধি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। একটি কুচক্রী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্নভাবে পায়তারা করছেন। তবে নিয়মিত অ্যাসেম্বলী না হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গৌতম কুমার মহন্ত বলেন, পরিপত্র অনুযায়ী রোস্তম আলীকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে রোস্তম আলীকে যখন দায়িত্ব দেয়া হয় তখন শাহজাহান আলী মৃধা অসুস্থতার কারণে ছয়মাসের ছুটিতে ছিলেন। তবে বোর্ড থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেয়ার জন্য এ বিষয়টি তিনি কখনো আমাকে অবগত করেননি। এছাড়া দুইপদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। তালবাহনার বিষয়টি ভিত্তিহীন।
এব্যাপারে নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাঃ মোবারুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ড যাকে নিয়োগ দিবে সেটাই কার্যকর হবে এবং শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের পরিপত্রে জৈষ্ঠতা ভিত্তিতে নিয়োগের কথা অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত গণ্য।
জনতার আলো/বুধবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯/শোভন
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.