জনতার আলো, মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় পাকাকরণের দীর্ঘ ২ বছর পর বিশ্ববাঁধের সংস্কারের (কার্পেটিংয়ের) কাজ শুরু হলেও চলছে ব্যাপক অনিয়ম। কোন কাজের দরের সাইন বোর্ড ছাড়াই চলছে তড়িঘড়ি করে কার্পেটিংয়ের সব কাজ।
এর আগে গত ২০১৬ সালে সড়কটির ফেরিঘাট থেকে জোতবাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ (রিপিয়ারিং সিলকোট) করা হয়। কিন্তু সড়কটির পাকাকরন কাজে তৎকালীন ঠিকাদার প্রকৌশলী অফিসের যোগসাজসের মাধ্যমে অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরন দিয়ে কাজ করায় তা অল্পদিনেই মাত্র ৩-৪মাসের ব্যবধানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কের নানা স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়।
এরপর দীর্ঘ ২বছর ধরে সড়কে আর কোন রিপিয়ারিং কাজ না হওয়ায় সড়কের প্রায় সব জায়গায় সব কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃৃষ্টি হয়। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল তো দূরে থাক লোকজনের ও চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত সড়ক ও জনপথ বিভাগ নওগাঁর অধিনে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের মান্দা সেতু সংলগ্ন ফেরিঘাট থেকে প্রসাদপুর গোল চত্বর হয়ে মান্দা হাসপাতাল মোড়ের পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ১৮ ফিট প্রশস্ত বিশিষ্ট সড়কের সংস্কারের ৩০ লাখ টাকার কাজ পান রাজশাহীর পিডিএস এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও ঠিকাদার মহিউদ্দিন বাশি।
তিনি ঠিকাদার নিযুক্ত হয়ে চলতি বছরের গত ২ মার্চ থেকে তিনি কোন কাজের দরের সাইন বোর্ড না টাঙ্গিয়ে কাজের দরের কোন সিডিউল না মেনে অত্যন্ত নিম্ন মানের ইট দিয়ে খোয়া বানিয়ে সড়কে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপর পানি না দিয়ে, কোথাও আবার সামান্য পানি দিয়ে একটি দেড়টন ভাইরোমাক্স বেবি রোলার ও একটি ৩টনের রোলার দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে।
গত ৮মার্চ বৃহস্পতিবার প্রসাদপুর বাজার গোল চত্বরের আশেপাশে অত্যন্ত গোপনে তাড়াহুড়ো করে পিচের বদলে পোড়া মবিল দিয়ে সড়কের নানাস্থানের পকেটগুলোর খোয়ায় তেল দিতে দেখা যায়। গত শনিবার সকালে অত্যন্ত নিম্ন মানের পাথর,পিচ ও তেল দিয়ে সংস্কারের (কার্পেটিংয়ের) কাজ শুরু করা হয়। তারপর ৬ইি খোয়ার বদলে মাত্র এক ইি খোয়া দিয়ে কাজ করা হয়েছে।
তেল প্রতি ফুটে ৩লিটার ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও মাত্র এক লিটার দিয়ে ৪০ফুট পর্যন্ত কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ১২ মিমি, ৮মিমি, ৬মিমি, ডোসার শিষ্ট, পিকাভেস ও পাথরের ডাষ্ট ব্যবহারের কথা থাকলেও ৬মিমি পাথর,ডোসার শিষ্ট, পিকাভেস ও পাথরের ডাষ্ট এবং দেশি পিচের পরিবর্তে ইরানী নি¤œমানের ৬০ গ্রেডের পিচ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এরপরও পাথর ও পিচ ৩কিলোমিটার দূরে ফেরিঘাট শিমুল বিশ্বাসের কবর স্থানের পূর্ব পার্শ্ব হতে গ্রেডিং করে (জাল দিয়ে) ২-৩টি ছোট ট্রাকটরে বহন করে এনে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্বে সংস্কারের (কার্পেটিংয়ের) কাজ করা হচ্ছে। এতে পিচ ও পাথরকুচিগুলো ঠান্ডা হয়ে আঁঠালোভাব কমে যাওয়ায় ভালোভাবে সড়কে জোড়া লাগছে না।
তাছাড়া ১৮ ফিট সড়কের উভয় পার্শ্ব (পুরোটাই) একসাথে সংস্কার করার ফলে সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের কারণে ময়লা মাটি মিশে গিয়ে কাজের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অল্প দিনেই কার্পেটিং উঠে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এসময় নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন, কার্যসহকারী আবদুল ওয়াহাবসহ কার্পেটিংয়ের কাজ তদারকি করতে দেখা যায়। কিন্তু ঠিকাদারের সাথে মোটা অঙ্কের অবৈধ লেনদেনের কারণে তাদের সম্পৃক্ততায় নিম্নমানের কাজ হলেও শুধু লোক দেখানো পরিদর্শন করে চলেছেন। ঠিকাদার মহিউদ্দিন বাশিকে সড়কে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি কোন সিডিউল না দেখিয়ে নওগাঁ অফিসে যেতে বলেন এবং নির্বাহী প্রকৗশলীর ফোন নম্বর দিতেও অস্বীকার করেন বলেন তার নম্বর দেওয়া যাবে না।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক মুঠোফোনে জানান, কাজের দরের সিডিউল মোতাবেক সব কাজ করা হচ্ছে। তবে কাজে ব্যাপক অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, কাজ ভালো ভাবেই চলছে।
তার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ সত্য হলে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এলাকাবাসী সড়কের দরপত্র মোতাবেক কাজ করার জন্য এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জনতার আলো/বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.