জনতার আলো, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মৃত্যুর গুজবের মধ্যে এবার প্রকাশ্যে এলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। রাজপ্রাসাদে গোলাগুলির ঘটনার এক মাস পর তার দেখা মিলল।
গত ২১ এপ্রিল রাজপ্রাসাদে গোলাগুলির ঘটনার পর প্রকাশ্যে না আসায় সৌদি আরবে বৈপ্লবিক সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসা যুবরাজ নিহত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করে ইরান ও রাশিয়ার কিছু গণমাধ্যম। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিকে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
কট্টর ধর্মীয় রাষ্ট্র সৌদি আরবে নারীদের চার দেয়ালের ভেতর থেকে বাইরে নিয়ে আসা, মেয়েদের স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা, অভিভাবক ছাড়া বাইরে যাওয়া, দেশে সিনেমা হল, বিনোদন কেন্দ্র চালু, পর্যটক ভিসা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি বোরকা বাধ্যতামূলক না করার মতো সাহসী সিদ্ধান্তের ঘোষণাও এসেছে। এর পেছনে যুবরাজের অবদান রয়েছে বলেই ধারণা করা হয়।
এর মধ্যে গোলাগুলিতে যুবরাজের মৃত্যুর খবর আলোড়ন তোলে। কারণ, ধারণা করা হচ্ছিল কট্টরপন্থী গোষ্ঠী সালমানের এসব উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখছে না।
মৃত্যুর গুজবের মধ্যে গত ১৭ মে মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি, বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে মোহাম্মদ বিন সালমানের ছবি প্রকাশ করে তার মৃত্যু গুজব উড়িয়ে দেয় সৌদি প্রেস এজেন্সি।
এরপর মঙ্গলবার সৌদির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে উপস্থিত হন মোহাম্মদ বিন সালমান। রমজানে সৌদি মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সালমানও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেদ্দাহর আল সালাম প্যালেসে এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার বিষয়ে জানান বাদশাহ। এসময় গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের নিন্দা জানায় সৌদি মন্ত্রিসভা। এ সময় ফিলিস্তিনের প্রতি সৌদির দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন সৌদি বাদশাহ। খবর সৌদি প্রেস এজেন্সির।
বৈঠকের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন যুবরাজ সালমান। বৈঠকের আগে তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
একই দিনে একই ভবনে অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিষদের বৈঠকে প্রধান হিসেবে যোগ দেন সালমান। এর চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি এই বছরের প্রথম চতুর্থাংশের সাধারণ বাজেটের কর্মসূচির ওপর অর্থমন্ত্রীর একটি প্রতিবেদন এবং কয়েকটি অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক বিষয় পর্যালোচনা করেন। খবর আরব নিউজের।
এছাড়া সম্প্রতি রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া সৌদি ফুটবলারদের সঙ্গেও ছবিতে দেখা যায় মোহাম্মদ বিন সালমানকে।
তবে দীর্ঘ একমাস পর প্রকাশ্যে আসলেও মোহাম্মদ বিন সালমান এতদিন কোথায় কীভাবে ছিলেন, কি কারণে অপ্রকাশ্যে ছিলেন তার কিছুই জানায়নি সৌদি প্রেস এজেন্সি।
তবে সম্প্রতি সৌদি রাজপরিবারের বরাত দিয়ে ডেইলি পাকিস্তান জানিয়েছিল যে এতদিন মিশরে অবকাশ যাপন করছিলেন সৌদির মুকুটধারী যুবরাজ।
গত ২১ এপ্রিল সৌদি রাজপ্রাসাদে গোলাগুলির ঘটনায় মোহাম্মদ বিন সালমান নিহত হয়েছেন- এমন আশঙ্কা করে খবর প্রকাশ করে রাশিয়ার ‘স্পুতনিক নিউজ’, ইরানের, ‘ফার্স নিউজ’ ও প্রেস টিভি’।
এসব প্রতিবেদনে নির্ভরযোগ্য কোনও সূত্রের কথা উল্লেখ না করলেও বেশ কিছু ধারণার ভিত্তিতে সৌদি যুবরাজ নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। ইরানের গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, ‘গত ২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদে একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। সেখানেই গোলাগুলি চলার সময় সৌদির প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
ফার্সি ভাষায় প্রকাশিত কাইহান পত্রিকা দাবি করে, ‘অজ্ঞাত একটি আরব দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যুবরাজ নিহত হওয়ার খবরটি পাঠানো হয়েছে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘২১ এপ্রিল সৌদির রাজপ্রাসাদে হামলার সময় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের শরীরে দুটি বুলেট আঘাত হানে। তিনি হয়ত মারা গেছেন। কারণ ওই ঘটনার পর যুবরাজকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।’
ইরানের ফার্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদ থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। যুবরাজ সালমানকে তখন রিয়াদে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।’
প্রেস টিভিতে বলা হয়, ওই ঘটনার পর থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এপ্রিলের শেষের দিকে যখন সৌদি সফরে যান তখনও যুবরাজকে কোনো ছবিতে দেখা যায়নি।
যদিও খবরে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন সালমান। কিন্তু সৌদির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইরের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি ছাড়া কোনো ছবি প্রকাশিত হয়নি।
২০১৫ সালে বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান তার ছেলে সালমান। এরপরই ইয়েমেন যুদ্ধে জড়ায় সৌদি আরব। ২০১৭ সালে তাকে বাদশাহের উত্তরসূরি (ক্রাউন প্রিন্স) ঘোষণা করা হয়।
এরপরই সৌদি আরবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্যও তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও প্রকাশ করেন সালমান, যা ভিশন ২০৩০ নামে পরিচিত।
এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে ৩৫ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি করে সৌদি আরব। যার মধ্যে ১১ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনা হবে। সংস্কারের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই যুবরাজের ইচ্ছায় সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। নারীদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখার অনুমতিও দেয়া হয়েছে। শুধু ত-ই নয়, বছরের শুরু থেকেই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র উপভোগের জন্য সিনেমা হল নির্মাণও করেছে দেশটি। উন্নত বিশ্বের মতো পার্ক, সি বিচ করার পরিকল্পনাও আছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করেন ক্রাউন প্রিন্স। দুর্নীতির অভিযোগে ১১ প্রিন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেককে গ্রেপ্তার করে শত কোটি ডলার আদায় করা হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, ক্ষমতা সুসংহত করতেই চেষ্টা করছেন যুবরাজ।
জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ২৪ মে ২০১৮/দানেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.