জনতার আলো,স্বাস্থ্য ডেস্ক: আমাদের কিছু অভ্যাস সুস্থ থাকার পথে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করে, যেমন- ধূমপানের কারণে ফুসফুস ক্যানসার হতে পারে অথবা ইয়ো ইয়ো ডায়েটিং অনুসরণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে এমন ১৬ বিষয় নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
* ধূমপান করা চিকিৎসকরা ধূমপান ত্যাগকে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে উল্লেখ করেন। প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিগারেটের কারণে ৪৮০,০০০ এরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়, সেখানে মৃত্যুর প্রধান প্রতিরোধযোগ্য কারণ হচ্ছে সিগারেট। তামাক ফুসফুস ক্যানসার ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। নিউ ইয়র্কের জেরিয়াট্রিশিয়ান রবার্ট স্টল বলেন, ‘ফুসফুস স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ধূমপান হচ্ছে সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক অভ্যাস। এটি এম্ফিসেমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের কারণ হতে পারে, যেখানে আক্ষরিক অর্থে আপনার শ্বাসরোধ হবে।’
* শ্বাসের মাধ্যমে সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক গ্রহণ করা নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে হলেও সঙ্গীকে ধূমপানের অভ্যাস বর্জন করতে বলা উচিত। সিডিসি অনুসারে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৫ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে প্রতিবছর ৪১,০০০ প্রাপ্তবয়স্ক অধূমপায়ী সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক উদ্দীপিত হৃদরোগ ও ফুসফুস ক্যানসারে মারা যায়।’ এছাড়া সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোকের কারণে শিশুদের ব্রংকাইটিস, কানের ইনফেকশন, অধিক অ্যাজমা অ্যাটাক ও অন্যান্য রোগ হতে পারে।
* নিয়মিত ব্যায়াম না করা ব্যায়াম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ওজন হ্রাসের জন্য নয়। নিউ ইয়র্কের ল্যানগোন হেলথের ইন্টারনাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর আলবার্ট আহন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ব্যায়াম চমৎকার, কিন্তু ওজন হ্রাসের জন্য এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নয়। ওজন হ্রাস প্রধানত ডায়েটের ওপর নির্ভরশীল।’ তিনি বলেন, ‘ব্যায়াম আপনার হৃদপিণ্ড, ঘুম, মানসিক স্বাস্থ্য, জয়েন্ট এবং অনেক কিছুকে সাহায্য করে, তাই প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।’
* স্ট্রেস সামলাতে না পারা স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কেবলমাত্র মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই খারাপ নয়, এটি আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ মোড সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন করে ফেলে, যার মানে হচ্ছে আপনি অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন, জিমে যাওয়া ছেড়ে দিতে পারেন এবং আপনার ঘুম ব্যাহত হতে পারে। এসব কারণে আপনার ওজন ও রক্তচাপ বেড়ে যাবে, যার ফলে হৃদরোগ ও অন্যান্য মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। স্ট্রেস হরমোন আপনার ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেবে, যে কারণে শরীরের পক্ষে রোগ নির্মূল করা কঠিন হবে। প্রত্যেকেরই স্ট্রেস থাকে এবং তা দূর করার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায় রয়েছে। ওয়াইনে বুঁদ হয়ে স্ট্রেস দূর করার চেষ্টা না করে নিয়মিত ব্যায়াম করুন, যা স্ট্রেস তাড়িয়ে দেবে এবং আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করবে।
* আবেগের জন্য খাওয়া চিকিৎসকরা রিকমেন্ড করেন না এমন একটি স্ট্রেস-বাস্টার হচ্ছে: কমফোর্ট ফুড। ওয়েবএমডি ডটকমের প্রধান মেডিক্যাল সম্পাদক এবং সহযোগী মেডিক্যাল পরিচালক ব্রুলিন্ডা নাজারিও বলেন, ‘আপনি স্বাস্থ্যের জন্য যে খারাপ একটি কাজ করেন তা হলো ইমোশনাল ইটিং বা আবেগ তাড়িত হয়ে ভোজন, এ কাজটি আপনি রাগান্বিত হলে বা মানসিক চাপে থাকলে অথবা বিষণ্ন হলে করে থাকেন।’ আপনি ক্ষুধার তুলনায় আপনার আবেগের জন্য যত বেশি খাবেন, আপনার অতিরিক্ত ভোজন ও ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। ক্ষুধা না থাকলে খাবেন না, ডা. নাজারিও এর পরিবর্তে গভীর শ্বাস নিতে বা মাথা পরিষ্কার করতে হাঁটতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
* ইয়ো ইয়ো ডায়েটিং মেনে চলা ইয়ো ইয়ো ডায়েটিং অনুসরণ করে সাময়িকভাবে ওজন কমানো হয়, তারপর ওজন পুনরায় বেড়ে যায় এবং আবার ডায়েটিং করা হয়। আপনার কাছে সাময়িকভাবে ওজন কমানো ভালো মনে হতে পারে, কিন্তু প্রতিনিয়ত ওজন হ্রাস ও ওজন বৃদ্ধি চক্রের মধ্যে থাকলে আপনার স্বাস্থ্য সমস্যা হবে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোকের ওজন ওঠানামার মধ্যে ছিল তাদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ ছিল। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন যে, ইয়ো ইয়ো ডায়েটিং স্ট্রেস হরমোন করটিসল বৃদ্ধি করতে পারে, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। সঠিক উপায়ে ওজন হ্রাসে অনুৎসাহিত হবেন না এবং স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখার দিকে ফোকাস করুন।
* পর্যাপ্ত ঘুম না যাওয়া মাস বা বছর ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না গেলে আপনার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের ঘাটতি মানসিক প্রখরতাকে আঘাত করতে পারে, জাঙ্ক ফুডের প্রতি আসক্ত করে তোলে, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডা. আহন বলেন, ‘আপনাকে আপনার শরীরকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে, এটিকে চাঙ্গা হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের সম্পূর্ণ আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন না হলেও অধিকাংশ লোকের কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।’
* ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভর করা যে কারো রাতে পর্যাপ্ত সময় চোখ বন্ধ রাখতে সমস্যা হলে তাদের অধিক ঘুমের জন্য স্লিপিং পিল বা ঘুমের বড়ি সঠিক উপায় হতে পারে। স্বল্পমেয়াদী ঘুমের সমস্যার ক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ ভালো হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটির ওপর নির্ভর করা ভালো নয়। দীর্ঘমেয়াদে স্লিপিং পিল সেবন করলে আপনার শরীর ফাঁদে পড়তে পারে, অর্থাৎ ঘুমের ওষুধ ছাড়া আপনার পক্ষে ঘুম যাওয়া কঠিন হবে। পরবর্তীতে এ সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে ঘুমের রাজ্যে হারাতে আপনাকে বড় ডোজের ওষুধ খেতে হবে। স্লিপিং পিলের নিরাপদ ব্যবহার জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
জনতার আলো/বুধবার, ২৩ মে ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.