জনতার আলো, মোঃ রিপন হাওলাদার { ক্রাইম চীফ }: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম লেগুনা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে মোট ১২১টি স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বাসে যাত্রী উঠানামা করা যাবে না বলে জানান হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই এই স্থানগুলো চিহ্নিত করে দেয়া হবে।
যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীরাও যেন আইন মেনে চলাচল করে-সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার ঘোষণা এসেছে। ফুটওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং বা আন্ডারপাস ছাড়া রাস্তা পার হলেই ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা এসেছে। হেলমেট ছাড়া মোটর সাইকেল জ্বালানি তেল পাবে না, অনুমোদন ছাড়া রিকশা জব্দ হবে-এমন সিদ্ধান্তও এসেছে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে মাসব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
রাজধানীতে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে পুরো সেপ্টেম্বর মাসে এই বিশেষ ট্রাফিক কর্মসূচি পালন করা হবে।
শুরুতে ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তায় এই মডেল বাস্তবায়ন করা হবে। পরে তা রাজধানী জুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
গাড়িগুলো যেন সারিবদ্ধ ভাবে চলে, যত্রতত্র যেন পার্কি না হয় এবং সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করাই এর উদ্দশ্য। আইন ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপি কমিশনার।
এই কাজে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করবে রোভার স্কাউট। প্রতি পালায় ৩২২ জন স্কাউট বিভিন্ন এলাকায় কাজ করবে।
গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে। এই আন্দোলনের সময় রাজধানীতে লাইসেন্স ও ফিটনেসহীন যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, পার্কিং, উল্টো পথে চলাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে আগে থেকেই। আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিক বৈঠকে চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় পুলিশকে। আর এর আলোকেই নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা আন্দোলনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছ্নে। আমরা সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানান রকম কাজ করছি। ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের সাধ্যমতো আইনগত পদক্ষেপ ও সচেতনামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
নাগরিকদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন পুলিশ কমিশনার। বলেন, ‘প্রত্যেকে যদি আমরা আইন না মানি তাহলে পুলিশের দ্বারা সম্ভব না সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।’
শহরে লেগুনা চলবে না
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা মহনগরীতে কোন ধরনের লেগুনা বা নিউম্যান হলার চলার কথা নয়। আমরা সুষ্পষ্ট ভাবে সুনিশ্চিত করব ঢাকা মহানগরীতে কোনভাবে লেগুনা চলবে না।’
‘লেগুনা চলবে শহরের বাইরে। যেখানে তাদের রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে ঢাকা মহানগরীতে কোন লেগুনা চলতে দেওয়া হবে না।’
তবে যেসব এলাকায় চলাচলের প্রধান মাধ্যম লেগুনা, সেসব এলাকায় বিকল্প কী হবে, সে কথা জানাননি মহানগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বাসে যাত্রী উঠানামা ১২১ স্থানে
বাসে যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা বন্ধ করে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করে দেয়ার কথাও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১২১টি বাস স্টপেজের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কমিশনার। জানান, এসব বাস স্টপেজের সাইনবোর্ড বসানো হচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।
‘এসব স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাস না থামানো যাবে না। পাশাপাশি বাস স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাসের দরজা খুলবে না, বন্ধ থাকবে। যাত্রীরাও বাস স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও নামতে পারবেন না।’
‘যেখানে সেখানে যেন যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থেকে যানজট না করে সেজন্য আমরা পুলিশ ও রোভার স্কাউট মিলে ব্যবস্থা নেব।’
এই স্টপেজগুলো ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রা ক্রসিংয়ের কাছাকাছি হবে বলেও জানান আছাদুজ্জামান মিয়া।
বাসে চালক-সহকারীর ছবি ঝুলাতে হবে
প্রতিটি বাসে চালক ও তার সহকারীদের ছবি টানাতে মালিকদেরকে নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার। বলেন, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে থাকতে হবে।
‘আপনারা সকল গাড়ির কাগজপত্র আপডেট রাখবেন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনোভাবেই ড্রাইভার নিয়োগ দেবেন না।’
শ্রমিকদের সঙ্গে দৈনিক চুক্তিতে বাস চালানো যাবে না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘যে বাসগুলো চলবে সেই বাসগুলোর ড্রাইভারদের বেতন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। …যারা চুক্তিতে গাড়ি দেবে তাদের রুট পারর্মিট বাতিল করব। এই ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হলে সাজা
সেখান সেখান দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা আর মেনে নেয়া হবে না বলেও জানান পুলিশ কমিশনার। বলেন, ‘ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস এবং জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হবে।’
‘রাস্তার মাঝখানে আইল্যান্ডের মধ্য দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতে কেউ রাস্তা পারাপার না হয়, সেই ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা দেব। তারপরও যদি কেউ ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পার হয়, সেক্ষেত্রে আমরা মোবাইল কোর্টে তার সাজার ব্যবস্থাও করব।’
হেলমেট ছাড়া তেল পাবে না বাইক
যেসব মোটর সাইকেল চালকের হেলমেট থাকবে না, যেসব মোটর সাইকেলে তিন জন আরোহী থাকবে, তারা পাম্পে জ্বালানি তেল কিনতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দেন পুলিশ কমিশনার।
‘আমরা ইতোমধ্যে পেট্রোল পাম্প মালিকদের সাথে কথা বলেছি। তারা হেলমেট না থাকলে তেল না সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
বাসের পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালকরাও যেন পাল্লাপাল্লি করতে না পারে, সে সেটাও দেখার ঘোষণা দেন পুলিশ কমিশনার। জানান, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তল্লাশি চৌকি তৈরি করা হবে। সেখানে রাস্তার পাশে গিয়ে গাড়িগুলোর কাগজপত্র পরীক্ষা হবে।
জব্দ হবে অনিবন্ধিত রিকশা
অতিরিক্ত রিকশার কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, মফস্বল শহরে চলার অনুমতি থাকা রিকশাও এখন রাজধানীতে চলে আসছে। এসব কারণে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।
‘ঢাকায় রেজিস্টার্ডভুক্ত না এমন যে কোন ধরনের রিকশা পেলে আমরা জব্দ করব এবং সেগুলো চলতে দেওয়া হবে না।
জনতার আলো/মঙ্গলবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.