জনতার আলো, চঞ্চল সরদার রাজবাড়ী প্রতিনিধি: সাঁতারে রাজবাড়ী জেলার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছেন রাজবাড়ীর ডলি আক্তার, লায়লা নুর, মিতা নুর, পুতুল ঘোষ, নিবেদিতা দাস, রূপালী আক্তার, সোনালী আক্তারসহ অনেকেই।
এদের মধ্যে অন্তার্জাতিক পর্যায়ে তিনটি বিশ্ব অলিম্পিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডলি আক্তার।
কিন্তু, রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থাভাবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ী জেলা সুইমিংপুলটি। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা সুইমিংপুলে বৃষ্টির পানি জমেছে। তারই মধ্যেই সাঁতার কাটছে ব্যাঙ। কিন্তু, সুইমিংপুলটি চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে তৈরি হচ্ছে না নতুন সাঁতারু।শিগগিরই সংস্কার করে সুইমিংপুলটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সরকার ২০০৩ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্বাবধানে রাজবাড়ী জেলা স্টেডিয়ামের পাশে প্রায় ৩ একর জমির ওপর ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন জাতীয় মানের এ সুইমিংপুলটি।
নির্মাণের পর ওই বছরের মাঝামাঝিতে পুলটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। একই বছরের শেষের দিকে পুলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনের পর থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চালু ছিল সুইমিংপুলটি। পরবর্তীতে সুইমিংপুলে কোনো লোকবল পদায়ন না করায় এবং গভীর নলকূপটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় পুলটি।এরমাঝে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জেলা পরিষদসহ স্থানীয়ভাবে অর্থের সংস্থান করে কয়েক দফায় পুলটি চালু করা হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল অবস্থায় রয়েছে সুইমিংপুলটি। পুলের টাইলসে জমেছে শ্যাওলা, অকেজো অবস্থায় রয়েছে ওয়াটার পাম্প, গভীর নলকূপ ও অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। বাকি পড়েছে দশ বছরের বিদ্যুৎ বিল ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ভূমি উন্নয়ন কর ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সীমানা প্রাচীর অরক্ষিত, তাই চুরি গেছে সুইমিংপুলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। সুইমিংপুলের এ বেহাল দশায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।রাজবাড়ীর নতুন প্রজন্মের সাঁতারু মিতু আক্তার বলেন, ‘সুইমিংপুলের অভাবে আমরা ঠিকমত অনুশীলন করতে পারছি না।
আমাদের দাবি এ সুইমিংপুলটি চালু করা হোক। যাতে আমরা ভালোভাবে অনুশীলন করে দক্ষ সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি।রাজবাড়ী জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সালমা আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সুইমিং পুলটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।
এ কারণে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা সাঁতার শিখতে পারছে না। অতিদ্রুত সুইমিং পুলটি চালু করলে এখান থেকে আবারও বিশ্বমানের সাঁতারু বের হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
’এদিকে- পুলটি চালু করার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে কয়েকবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি।তিনি বলেন, ‘আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে সুইমিংপুলটি বন্ধ হয়ে যায়।
এখন এটি চালু করতে বিপুল পরিমাণ টাকার প্রয়োজন। ২০১৩ সালে আমি ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বে এসে পুলটি চালু করার জন্য অর্থ চেয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি।
কিন্তু, সেখান থেকে কোনো সাড়া পাইনি।’তিনি বলেন, ‘সুইমিংপুলটি চালু করতে পারলে আমাদের আগামী প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা সাঁতার শিখতে পারবে।
এরপর সাঁতার প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে তারা রাজবাড়ী জেলাসহ সারা বাংলাদেশে সাঁতারু তৈরি করে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয় অর্জন করতে পারবে।
জনতার আলো/শনিবার, ০৭ জুলাই ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.