জনতার আলো, অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক : রোজায় চাহিদা বাড়ে, এমন বেশ কিছু পণ্যের দাম এবার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে মসুর ডাল, রসুনের দাম। এর বাইরে ছোলা, বুট, বেসন, চিনি, গরুর মাংস, চিকন ও মাঝারি চালের দামও গত রোজার তুলনায় এবার বেশ খানিকটাই কম।
তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজের দাম অনেকটাই বেশি। আর ভোজ্যতেল, আলু, মুরগির মাংস, মাছের দামে খুব বেশি হেরফের নেই।
শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের কাছে পবিত্র মাস রমজান। সিয়াম সাধনার এই মাসে দিনে পানাহার বন্ধ রেখে রোজা রাখেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তবে সন্ধ্যায় ইফতার করে রোজা ভাঙতে হয় এবং ভোরের আগে সেহরি খেয়ে রোজার নিয়ত করতে হয়। এই দুটি সময় খাবারের জন্য বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে।
রোজা আসার আগে আগে যেসব পণ্যের চাহিদা প্রতি বছর বাড়ে, সেগুলোর দামও বেড়ে যায়। এবারও বেশ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। তবে এবার চাল থেকে শুরু করে ডালজাতীয়সহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে।
চালের বাজারেও কয়েক মাসের আগের তুলনায় স্বস্তি এসেছে। গত বছর এই সময় মোটা চালের দাম বেড়ে ৪৫ থেকে ৫২ টাকায় উঠে যায়। এখন মোটা চাল ৪০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।
মাঝারি ও সরু চালের দামও গত এক মাসে কেজিতে ছয় থেকে আট টাকা কমেছে। তবে চিকন চালের দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখনও কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেশি।
গত বছর রোজায় চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা কেজি দরে। তবে এবার খুচরা পর্যায়ে এখন দাম ৫৬ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ডালের বাজারে স্বস্তি আরও বেশি। মসুর ডাল কেজিতে ৫৫ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে এখন। আর সবচেয়ে ভালো মানের ডাল পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকায়। এক বছর আগে যার দাম ছিল সর্বনিম্ন ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০টাকায়।
রোজার মাসে তুমুল চাহিদা থাকা ছোলার দামও গত বছরের তুলনায় এবার অনেকটাই কম। গত বছর রোজার আগে আগে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পণ্যটি। আর এখন তা পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি করে। গত এক মাসে ছোলার দাম বাড়েনি, বরং কেজিতে দুই টাকার মতো কমেছে।
বুটের ডালও গত বছরের তুলনায় কেজিতে পাঁচ টাকা করে কমে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এই ডাল।
রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন আরেকটি পণ্য বেসন। একে আসলে ডালের গুড়া বলা যায়। রোজায় ব্যাপক জনপ্রিয় আলুর চপ, বেগুনিসহ বিভিন্ন খাবার বানাতে ব্যবহার হয় এই পণ্যটির। গত বছর রোজায় বেসন বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৭০ টাকায়। চলতি বছর এই পণ্যটির দাম ৬০ টাকা দরে। বলা হচ্ছে, ছোলার দাম কম থাকলে বেসনের দামু কম থাকবে।
কৃষি মার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী মুরাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ছোলার দাম এবার বাড়ে নাই। মাঝে কেজিতে ২-৩ টাকা করছিল। গত বছরের চেয়ে এবার দাম কম আছে। প্রথম রোজায় কী হইবে আগে থেকে কেমনে কই? প্রতি বছর দাম বাড়ে, তবে এইবার বাড়ে নাই, এইটা বলতে পারি।’
পেঁয়াজের দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন বেশ খানিকটাই বেশি। গত বছর কেজিতে ২০ থেকে ৩২ টাকায় পাওয়া যেত যে পণ্য, এখন তার দাম ৩৫ থেকে ৫২ টাকা।
পেঁয়াজের দাম বাড়লেও স্বস্তি রশুনের দামে। গত বছর মানভেদে কেজিপ্রতি দাম ছিল ১০০ থেকে ২৪০ টাকা। এবার সেটি কমে হয়েছে ৬০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। রোজায় তুমুল চাহিদা থাকে এমন একটি পণ্য খেজুর। বিক্রেতার জানান, এবার পণ্যটির দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কেজি ১০ টাকা করে বেশি।
রোজায় চাহিদা বাড়া গরুর মাংসের দামও এবার আগের বছরের চেয়ে কেজিতে ৩০ টাকা কমে নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১ রোজা থেকে ২৬ রোজা অবধি দেশি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ হয়েছিল কেজিপ্রতি ৪৮০ টাকায়, সেটি এবার নির্ধারণ হয়েছে ৪৫০ টকায়।
ভোজ্যতেলের দামে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খুব বেশি হেরফের নেই এবার।
এক মাসে বেড়েছে যেসব পণ্যের দাম
বাজারদর তদারকিতে বাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাব অনুযায়ী এক মাস আগের তুলনায় আগে পেঁয়াজ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, আলু ২২ শতাংশ, রশুন ১২ থেকে ১৫ শতাংশ, আদা ১৫ চিনি চার শতাংশ, আর রুই মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।
পণ্যের দাম বাড়লে ক্রেতারা বরাবরই নাখোশ হন। রাজধানীর শেখেরটেকের বাসিন্দা সাত্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রমজান মাস, ইবাদতের মাস। কিছু কিছু মানুষ, এই মাসটাকে নিয়ে ব্যবসা করে। এটা ঠিক না। মানবিক গুণ সবার থাকা উচিত। দাম বাড়ে না, এমন কোনো জিনিস নাই।’
চিনির দাম কেন হঠাৎ বেড়েছে, এটা নিয়েই ক্রেতাদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একজন বিক্রেতা। মুদি ব্যবসায়ী জসিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চিনি বস্তায় ৩০০ টাকার মত বাড়ছে। আমরা তো আড়তে কিছু কইতে পারি না। এইখানে এক কেজি বেচতে গেলে এক হাজারটা কথা শোনা লাগে।’
‘দাম বাড়ে এটা কাস্টমাররা জানে না? এই যে আপনারা আহেন, পত্র-পত্রিকায় লেহেন। এডি কাস্টমাররা পড়ে না?’
নিত্যপণ্যের মধ্যে এই পণ্যগুলো ছাড়া চাল থেকে শুরু করে বেশিরভাগ পণ্যের দামই গত এক মাসে হয় কমেছে নয় একই রয়েছে।
জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.