জনতার আলো, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মুখ থেকে এমন বক্তব্য আসার মাঝেই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জমি ইজারা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইরাবতী পত্রিকা।
মিয়ানমারের ইরাবতী এক প্রতিবেদনে বলছে, রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আবাদি জমিগুলি সেখানকার রাখাইনদের এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ৭০ হাজার একর জমির মধ্যে ১০ হাজার একর জমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। বাকিগুলোও লিজ দেওয়া হবে। যদিও মিয়ানমারের আইনমন্ত্রী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তবে রাখাইন রাজ্যের আইনমন্ত্রী উ মং অন ভাষ্য, জমিগুলো খালি ফেলে রাখা ভালো হবে না। স্থানীয় মানুষ ও ভূমিহীন কৃষকদের এগুলোতে চাষ করতে দেওয়া উচিত। বেসরকারি কোম্পানিকেও এসব জমি লিজ দেওয়া যেতে পারে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে ভিটামাটি ফেলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ফেলে আসা বিপুল পরিমাণ জমি সেখানে অনাবাদি রয়েছে। আর এসব জমিই ইজারা দিচ্ছে সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাসিন্দাদের ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে।
শনিবার (০২জুন) সিঙ্গাপুরে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংলাপে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাং তুন জানান, রোহিঙ্গারা ফিরতে চাইলে তাদের সবাইকে ফিরিয়ে নিতে রাজি তার দেশ।
রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর তাদের ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা ধানাইপানাই করে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আদৌ ফিরিয়ে নেবে কিনা সংশয় রয়েছে।
এরই মধ্যে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার একর জমি লিজ দেয়ার কথা জানিয়েছে ইরাবতী। যদিও সেটি অস্বীকার করেছেন রাখাইনের কৃষি, খনন ও বনায়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী উ কিয়াও লিন।
তিনি বলেছেন, আমরা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। তারা যা নির্দেশ দেবে তেমনটাই করব। ৭০ হাজার একর জমিতে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নেই আমাদের। যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়নি, তারা নিজেদের জমিতেই চাষাবাদ করতে পারবে।
রাখাইন রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে মোট ১ কোটি ১০ লাখ একর ধানি জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ হাজার মংডুতে, ৭৭ হাজার বুথিয়াডংয়ে ও ৮৮ হাজার রথেডংয়ে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে চার দশক ধরে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সর্বশেষ, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত হামলার অভিযোগ তুলে সেনা অভিযানের নামে নৃশংসতা শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’বলেও আখ্যা দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নিপীড়নকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সমস্ত অভিযোগই বরাবরের মতো অস্বীকার করে আসছে।
জনতার আলো/রবিবার, ০৩ জুন ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.