জনতার আলো, বিনোদন ডেস্ক: সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম ও বিনোদনের মাধ্যম চলচ্চিত্র। এই মাধ্যমের তারকাদের নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দর্শক-ভক্তদের। তারকাদের জীবনযাপন, তাদের রোজনামচা, অতীতের কাহিনি সবকিছুই চুম্বকের মতো টানে।
তেমনি তারকাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও আগ্রহ দেখা যায়। অনেকেই জানতে চান প্রিয় নায়িকার লেখাপড়ার ব্যাপারে। সেই কৌতূহল মেটাতে নায়িকাদের নিয়ে ভিন্ন এক আয়োজন। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে এমন কজন নায়িকাকে, যারা স্কুলছাত্রী থাকাকালীন চলচ্চিত্রে পা রাখেন। অভিজ্ঞতায় তারা পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন ঢাকাই সিনেমার পোস্টার গার্ল-
শাবানা এ তালিকায় প্রথমেই উল্লেখ করা যায় চিত্রনায়িকা শাবানার নাম। ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় আসেন তিনি। শাবানা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি। তার আগেই সিনেমায় নাম লিখিয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পান।
অভিনয়কে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়ায় স্কুলের বারান্দা মাড়াননি। শাবানার প্রকৃত নাম রত্না। সার্টিফিকেটে নাম আফরোজা সুলতানা। চিত্র পরিচালক এহতেশাম তার শাবানা নামটি দেন।
১৫ বছর বয়সে নায়িকা হওয়া শাবানা ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথম ছবিতে তার নায়ক ছিলেন চিত্রনায়ক নাদিম। শাবানা অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’।
ববিতা ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটে সুন্দরী অভিনেত্রী ববিতার। ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় এবং ওইদিনই তার মা মারা যান।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অভিনেত্রীও স্কুলের ছাত্রী হিসেবেই চলচ্চিত্রে এসেছিলেন। পরবর্তীতে নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন ইংরেজিসহ বেশকিছু ভাষায়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য তিনি যশোর দাউদ পাবলিক বিদ্যালয়ের পর আর কোথাও প্রবেশ করেননি।
চলচ্চিত্রে ববিতা দুর্দান্ত সফল এক নাম। তার অভিনয়, গ্ল্যামার মুগ্ধতা ছড়িয়েছে আশি-নব্বই দশকেও। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকলেও ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বেশ আশাবাদী। স্বপ্ন দেখেন চমৎকার সিনেমার দিন ফিরে আসবে আবারও। তিনিও নিয়মিত অভিনয় করবেন।
২৫০ এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা ববিতা ১৯৭৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন। এছাড়া ১৯৮৬ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক এবং ২০০৩ ও ২০১৩ সালে দুইবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন।২০১৮ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
শাবনূর
উইকিপিডিয়া অনুসারে মাত্র ১৩ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাবনূর। ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করা এই অভিনেত্রীর পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। চিত্র নির্মাতা এহেতেশাম তার সিনেমাটিক শাবনূর নাম রাখেন। শাবনূর শব্দের অর্থ রাতের আলো। সে থেকেই তিনি এ দেশের কোটি পুরুষের আরাধ্য নারী ও নায়িকা।
শাবানা ও ববিতার মতো শাবনূরও স্কুলছাত্রী অবস্থায় সিনেমায় আসেন ও জনপ্রিয়তা পান। তবে তিনি আইএ পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। শাবনূরের পিতার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই ও বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তিনি।
শাবনূরের প্রথম চলচ্চিত্র ‘চাঁদনী রাতে’। সে ছবিটি ব্যর্থ হলেও নায়ক সালমান শাহের বিপরীতে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান তিনি। বলা হয় নব্বই দশকের পর থেকে তার মতো জনপ্রিয়তা আর কোনো অভিনেত্রীর ভাগ্যে জুটেনি। শাবনূর মানেই ছিলেন সিনেমা দেখতে দর্শকের হুড়োহুড়ি। শাবনূর মানেই প্রযোজকের নির্ভার থাকা।
বর্তমানে চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘এতো প্রেম এতো মায়া’ ছবিতে তার অভিনয়ের কথা রয়েছে।
পূর্ণিমা চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র পূর্ণিমা। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবিতে রিয়াজের বিপরীতে অভিষিক্ত হন তিনি। ১৯৯৭ সালে যখন ছবিটি মুক্তি পায় তখন পূর্ণিমা নবম শ্রেণির ছাত্রী।
‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ২০১০ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। মাঝে কিছুটা সময় চলচ্চিত্রে বিরতি দিলেও সম্প্রতি দুটি ছবিতে কাজ করছেন তিনি। দুটি ছবিরই নায়ক ফেরদৌস।
পূজা চেরি ঢাকাই সিনেমার নতুন সেনশেসন পূজা চেরি। ‘নূরজাহান’ দিয়ে অভিষিক্ত হলেও দর্শক পূজার অভিনয়ের জাদু দেখেছেন ‘পোড়ামন ২’ ছবিতে। সিয়ামের বিপরীতে সাবলীল অভিনয় করে প্রশংসিত পূজার মধ্যে সবাই খুঁজে পেয়েছেন চঞ্চলা শাবনূরকে।
বর্তমানে নামের আগে চিত্রনায়িকা তকমা লাগলেও গত বছরও শিশুশিল্পী পূজা হিসেবেই চেনা হতো তাকে। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুলের ছাত্রী পূজা। স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই হয়েছেন নায়িকা।
৩০ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে তার তৃতীয় ছবি ‘দহন’। রায়হান রাফি পরিচালিত এই ছবিতে পূজার নায়ক সিয়াম আহমেদ।
এছাড়াও সোনিয়া, অন্তরা, রত্না এই তিন নায়িকাও স্কুলের ছাত্রী থাকা অবস্থায়ই নায়িকা হয়েছেন বলে শোনা যায়। সোনিয়া বর্তমানে লন্ডনে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছেন। নায়িকা অন্তরা কয়েক বছর আগেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।
অন্যদিকে চিত্রনায়িকা রত্না অনেকটা সময় দূরে সরে ছিলেন অভিনয় থেকে। সম্প্রতি তিনি আবারও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে শেষ করেছেন শিক্ষাজীবন।
জনতার আলো/বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৮/শোভন
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.