জনতার আলো, স্টাফ রিপোর্টার: করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে মনে করে বিএনপি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ এমন দাবি করে ব্যর্থতার জন্য অবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের পক্ষ থেকে এই দাবি করেন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিশেষ করে করোনা টিকা নিয়ে সরকার যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে লেজেগোবরে করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, চীনের সিনোফার্ম ও কো-ভ্যক্স প্লাটফার্ম থেকে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৬২০ লাখ ডোজ টিকা সংগ্রহ করেছে কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আকুল আহ্বান” বিজ্ঞাপনে দেড় কোটি ডোজ সংগ্রহের কথা বলায় প্রমাণিত হয়েছে সরকার করোনা শুরুর প্রথম থেকেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
সরকার টিকার মূল্য নিয়েও মিথ্যাচার করেছে এমন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দিলেও ২ বছর দুই মাস লাগবে। অথচ এখন পর্যন্ত টিকা প্রাপ্তির কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার দিতে পারছে না। অথবা টিকা প্রাপ্তির উৎস সম্পর্কে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। সরকারের নিজস্ব দুর্নীতিপরায়ন মহলকে সহায়তা করার জন্যই টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট কোন রোড ম্যাপ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্ত মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই একইভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। অযোগ্যতা, দুর্নীতিপরায়নতা এবং সকল ব্যর্থতার দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, হাসপাতালগুলোতে এখনও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেড, অক্সিজেন, আইসিইউ সরবরাহ করা হয়নি। জরুরিভিত্তিতে প্রতিটি জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা বেডের সংখ্যা বাড়ানো, অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং আইসিইউ বেড সংযোজন করা এখন সময়ের দাবি। আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গাছের তলায়, অ্যাম্বুলেন্সে অথবা ভ্যানের ওপর রোগীর চিকিৎসার দৃশ্য কি মধ্য আয়ের বাংলাদেশ বা উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশের ছবি দেখায়।
সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ফখরুল বলেন, শুধু মিথ্যাচার করে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সরকারের নেই। অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।
ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের লকডাউন লকডাউন খেলা আর এক মর্মান্তিক তামাশা।
ফখরুল বলেন, প্রথমে লকডাউন তারপরে কঠোর লকডাউন পরে শিথিল লকডাউন ঈদের ১ দিন পর থেকে আরও কঠোর লকডাউন, শিল্প কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা থেকে মনে হয় সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সবই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে। এই সব অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষ, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, মাঝি, বাইকের চালকেরা, পরিবহন শ্রমিকেরা।
খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য নগদ এককালীন ১৫ হাজার টাকা দেয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি বারবার নগদ টাকা দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সরকার কখনই তাতে কর্ণপাত করেনি উপরন্ত বিদ্রুপ করেছে। বিএনপি আবারও দাবি জানাচ্ছে এই সব মানুষদের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হোক। ছোট ব্যবসায়ীদের পুঁজির ব্যবস্থা করা এবং দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হইক।
জনতার আলো/ শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১/শোভন