জনতার আলো, স্টাফ রিপোর্টার: আগামী বছর হজে যেতে নিবন্ধনের বাকি আর চারদিন। এখন পর্যন্ত নিবন্ধনে আগ্রহ নেই মানুষের। গত ২২ দিনে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে নিবন্ধিত হয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী। কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আগামী বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এখনো প্রায় ৯৮ শতাংশ কোটা পূরণ না হওয়ায় বড় একটি অংশ এবার ফাঁকা থাকার আশঙ্কা করছেন হজ সংশ্লিষ্টরা।
সৌদি সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার কারণে আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে কতজন হজে যাবে তা ডিসেম্বরের মধ্যেই সৌদি আরবকে জানাতে হবে। আগামী ৮ জানুয়ারি সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি হবে। অন্য বছর হজচুক্তির পর নিবন্ধন শুরু হলেও এবার সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী চুক্তির আগেই নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
সেই হিসেবে হাতে এবার সময় খুবই কম। বাড়তি সময় পাওয়া না গেলে এবার হজের কোটার বড় অংশ খালি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ এজেন্সির মালিকরা।
হজ এজেন্সি মালিকরা জানান, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, অনেকেই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এর মধ্যে চলছে টানা অবরোধ ও হরতাল। বেশির ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। অন্যদিকে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়েছিল, নিবন্ধন চলে এপ্রিল পর্যন্ত। তাই এবারের আগেভাগে নিবন্ধনের তথ্য অনেকে জানেনও না।
নিবন্ধন নিয়ে চিন্তা করছি না। যতজন হবে ততজন যাবে। নির্বাচন আছে। মানুষ মনে করতে পারে নিবন্ধনের সময় বাড়বে। তবে ৮ জানুয়ারির পর সময় আর বাড়ানোর সুযোগ নেই। নিবন্ধন কেমন হবে সেটা এখনো বলা যাবে না। তবে কোটা পূরণ না হলে কোনো সমস্যা নেই।- মো. মতিউল ইসলাম
চলতি বছরের তুলনায় আগামী বছরের হজের খরচ কিছুটা কমানো হয়েছে। এরপরও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সেটা এখনো অনেক হজে গমনেচ্ছুর সাধ্যের বাইরে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা ডেকেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সালের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৪ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটায় ১০ হাজার ১৯৮ ও বেসরকারি এজেন্সির কোটায় এক লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালন করতে পারবেন বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
আগামী বছর (২০২৪ সাল) হজে যেতে সরকারি-বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর। নিবন্ধনের শেষ সময় আগামী ১০ ডিসেম্বর। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সবশেষ নিবন্ধনের ক্রমিক ৯১০০৯৬।
কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত গত ২২ দিনে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার ৭৭৬ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার দুই হাজার ৩৪ জন। বাকি চারদিনে সোয়া লাখের বেশি হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
যদিও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সৌদি সরকার যদি নতুন নিয়ম বাস্তবায়নে দৃঢ় থাকে তারপরও ডিসেম্বরজুড়ে নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। সেক্ষেত্রে নিবন্ধনের সময় কয়েক দফা বাড়বে।
এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিবন্ধন নিয়ে চিন্তা করছি না। যতজন হবে ততজন যাবে। নির্বাচন আছে। মানুষ মনে করতে পারে নিবন্ধনের সময় বাড়বে। তবে ৮ জানুয়ারির পর সময় আর বাড়ানোর সুযোগ নেই। নিবন্ধন কেমন হবে সেটা এখনো বলা যাবে না। তবে কোটা পূরণ না হলে কোনো সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, ‘কতজন হজে যাবেন সেটা ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করতে হবে। সৌদি আরব অনেক সিস্টেম পরিবর্তন করেছে। মিনায় কেউ আগে বুকিং না দিলে তার জায়গা পিছিয়ে যেতে থাকবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন না করলে আমরা ভালো প্যাকেজ দিতে পারবো না। ডিসেম্বরের পরে এ প্যাকেজ আর কন্টিনিউ করবো না। কারণ আমরা প্যাকেজে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি কাছে রাখবো। শুনেছি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া বিভিন্ন জোনে বুকিং নিয়েছে।’
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘হজযাত্রীর সংখ্যা না জানতে পারলে আমরা বুকিং করতে পারছি না। হজযাত্রী নিয়ে চুক্তি করতে হবে। আগামী ৮ জানুয়ারি সৌদির সঙ্গে হজ চুক্তি হবে। বাংলাদেশ থেকে এবার কতজন হজ করতে যাবে সেই সংখ্যা ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে বলেও জানান মতিউল ইসলাম।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে, নিবন্ধন খুব ধীরে হচ্ছে। এছাড়া গত বছর নিবন্ধন আরও অনেক দেরিতে হয়েছিল। অনেকে হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না। শেষ মুহূর্তে নিবন্ধনটা বেশি হয়।’
তিনি বলেন, ‘সার্বিক অবস্থা নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি মিটিং ডেকেছে। দেখি সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়।
নির্বাচন সামনে, নিবন্ধন খুব ধীরে হচ্ছে। এছাড়া গত বছর নিবন্ধন আরও অনেক দেরিতে হয়েছিল। অনেকে হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না। শেষ মুহূর্তে নিবন্ধনটা বেশি হয়।- হাব মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার
‘আশা করছি নিবন্ধনের সময় বাড়বে। সৌদি আরবও সময় বাড়াবে, তা না হলে কোটা পূরণ হবে না’ বলেন হাব মহাসচিব।
চট্টগ্রামের আল কিবলা হজ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ চলছে। নিবন্ধন করছে না মানুষ। পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার এখান থেকে ২০০ জনের বেশি প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করার জন্য প্রস্তুত আছেন ২০ জনের মতো। বাকিরা কী করবেন এখনো বুঝতে পারছি না।
ঢাকার কলাম্বিয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিবন্ধনে এবার খুবই ধীরগতি। আশা করছি সময় বাড়বে। নিবন্ধনের জন্য এখন একটা সিরিয়াল ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। যখন মানুষ নিবন্ধন করবে না তখন প্রাক-নিবন্ধিত সবাইকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবার ভোটের বছর। মানুষ ভোট নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও তো বেশি ভালো নয়। সব মিলিয়েই নিবন্ধনের হার কম। তবে সময় না বাড়লে কোটার একটা বড় অংশ খালি থাকবে বলে মনে করছি।’
সিলেটের হজ এজেন্সি নিউ মডার্ন ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘নিবন্ধনের হার একেবারে কম। করোনার পর যাদের হজ-ওমরাহ করার বাকি ছিল তারা অনেকেই তা করে ফেলেছেন। এছাড়া মানুষের আর্থিক বিষয় তো রয়েছেই। সামনে দেখা যাক কী হয়।
হজের সর্বনিম্ন খরচ প্রায় ৬ লাখ
আগামী বছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজে যেতে সর্বনিম্ন খরচ কোরবানিসহ প্রায় ৬ লাখ টাকা। যদিও চলতি বছরের তুলনায় এটা অনেকটা কম। তারপরও হজে গমনেচ্ছু অনেকের সাধ্যের বাইরে বলে মনে করছেন অনেকে।
সরকারিভাবে আগামী বছর হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ হজ প্যাকেজের মধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। সাধারণ প্যাকেজে চলতি বছরের চেয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম খরচ হবে।
বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হবে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। চলতি বছরের তুলনায় খরচ কমেছে ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সব হজযাত্রীকে কোরবানির খরচ আলাদা করে দিতে হবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের সময় নেওয়া ২৯ হাজার টাকা বাদে প্যাকেজের বাকি টাকা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার এজেন্সির হজযাত্রীরা ২ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। তাদের হজ প্যাকেজের বাকি টাকা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা দেওয়া যাবে বলেও জানিয়েছে হাব।
এবার ৯ দফা সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ হয়নি
চলতি বছর হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় নয় দফা বাড়িয়েও কোটা পূরণ হয়নি। এবার এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন হজ পালন করেন। ৪ হাজার ৩১৪ জনের কোটা খালি থেকে যায়।
এবার আগের বছরের চেয়ে হজের খরচ সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৬ হাজার টাকা ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় দেড় লাখ টাকা বেড়েছিল। এ খরচ হজে গমনেচ্ছু অনেকের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। তাই নিবন্ধনের সময় ৯ দফা বাড়িয়েও কোটা পূরণ করা যায়নি।
জনতার আলো/বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩/শোভন
আপনার মতামত লিখুন :