জনতার আলো, স্টাফ রিপোর্টার: দেশের খাদ্য মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি চালের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বৈদেশিক উৎস থেকে আমদানির প্যাকেজ-৩ (জাতীয় দরপত্র) এর আওতায় এক লাখ টন সিদ্ধ চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ জন্য ব্যয় হবে ৪২২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রশীদ অটোমেটিক রাইস মিল দেশের ৫২টি কেন্দ্রে এ চাল সরবরাহ করবে। এছাড়াও এক লাখ ২০ হাজার টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মোট ১৫টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘নোয়াখালি বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও একাডেমিক সুবিধা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ৩য় একাডেমিক ভবন ও কেন্দ্রীয় গবেষনাগার নির্মাণ (১০ তলা ভিতে, ১০ তলা) কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ১৭৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় লেকের উপর ২টি সেতুর অবশিষ্টাংশ নির্মাণ, ১টি লেকের উন্নয়ন ও প্রটেকশন কাজ এবং ৭টি রাস্তা নির্মাণ কাজের প্রথম ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের অতিরিক্ত ৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার অতিরিক্ত কাজের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিদ্যমান পাসপোর্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ( De la Rue, UK)- এর কাছ থেকে পূর্বের চুক্তির ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত ৫০ লাখ এমআরপি বুকলেট ও ৫০ লাখ ৫০ হাজার লেমিনেশন ফয়েল সংগ্রহের পুনরাবৃত্ত ক্রয়াদেশ প্রদানের নিমিত্ত চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৩৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তিউনিসিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপেরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে প্রথম লটে ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।’
একই মন্ত্রণালয়ের অপর একটি প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কো থেকে ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। এজন্য ব্যয় হবে ৬৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কালখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশীয়ানি-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া নতুন রেলপথ নির্মান (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাইটেক পার্কের জন্য মির্জাপুর ও মৌচাক স্টেশনের মধ্যবর্তী কালিয়াকৈরে একটি ‘বি’ ক্লাশ স্টেশন নির্মাণ’ প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অভিহিতকরণ করা হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪১ হাজার ৯২১ কিলোমিটার কন্ডাক্টর ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ব্যয় হবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা।
এছাড়াও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদি চুক্তির আওতায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে জানুয়ারি-জুন, ২০১৮ সালের প্রান্তিকের প্রিমিয়াম ও মূল্য (রেফারেন্স প্রাইস অনুযায়ী) অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিভিন্ন দেশ থেকে এসব জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। জ্বালানি তেলের প্রিমিয়াম হিসেবে ব্যয় হবে ২৪৫ কোটি টাকা। আর মোট দাম নির্ধারণ করা হবে আন্তর্জাতিক দরের ওপর ভিত্তি করে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ বিধি-বিধান অনুসরণ করে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ১০০০ পিএসআইজি চাপ সম্পন্ন ১৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ব্যয় হবে ৩৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বৈঠকে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’এর আওতায় রূপকল্প-৯:২ডি সাইসমিক প্রকল্পের আওতায় ২ডি সাইসমিক কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহারের জন্য ২ডি সাইসমিক ডাটা প্রসেসিং সিস্টেম সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে পাঁচ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর আওতায় রূপকল্প-১ শীর্ষক প্রকল্পের খনন কাজে ব্যবহারের জন্য ড্রিল পাইপ ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।’
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাবে মোট ৭০ হাজার টন সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। এর একটি প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ৪৫ হাজার টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। এর মধ্যে ২৫ হাজার টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৭৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং বাকি ২০ হাজার টন আমদানি করতে ব্যয় হবে ৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এছাড়াও বৈঠকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরব আমিরাত থেকে ২৫ হাজার টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানির আরো একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৫২ কোটি টাকা।
জনতার আলো/বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮/শাহানা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.