জনতার আলো, নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শাহবাগের ঐতিহাসিক শিশুপার্কটি বন্ধ হয়ে গেল। চলতি বছরের প্রথমদিন থেকে ৪০ বছরের পুরনো এই বিনোদন কেন্দ্রটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত বন্ধ হলেও নগরবাসীর অনেকেই সে তথ্য জানেন না। ফলে অনেকেই শিশু-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে বিনা নোটিশে পার্কটি বন্ধ করে দেয়ায় অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সহকারী প্রকৌশলী ও শিশুপার্কের ম্যানেজার জাকির হোসেনের দাবি, নোটিশ দিয়েই পার্কটি বন্ধ করা হয়েছে। হয়তো নগরবাসীর চোখে পড়েনি।
রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের দুটি প্রবেশপথে ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের (যান্ত্রিক) নির্বাহী প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদের নামে দেয়া একটি বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে।
তাতে লেখা রয়েছে, ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শাহবাগ শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজের সমাপ্তির পর শিশুপার্কটি সর্বসাধারণের জন্য খোলার বিষয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের ভেতরে ভাঙচুর ও সংস্কার কাজ চলছে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের কাছে এক নামে পরিচিত শিশুপার্কটি এখন ধ্বংসস্তূপ। হঠাৎ করে অপরিচিত কেউ দেখলে মনে করবে যুদ্ধক্ষেত্র। বড় বড় বুলডোজার দিয়ে রাইডগুলো ভাঙা হচ্ছে। সেগুলো এদিকে-সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। টিকিট কাউন্টারগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। দক্ষিণ দিকের ফুডকোর্টগুলো ভাঙার কাজ চলছে। বড় বড় মাটিকাটার ড্রেজিং মেশিনে মাটি খুঁড়ে গর্ত করা হচ্ছে। গোটা শিশুপার্ক ধুলায় ধূসর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের (তৃতীয় প্রকল্প) অধীনে ৫০০টি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং, দৃষ্টিনন্দন জলাধারসহ হাঁটারপথ, আন্ডারপাস, মসজিদ ও অত্যাধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। প্রকল্প মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ১৯৭৯ সালে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ নামে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য পাবলিক সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এই শিশুপার্কটি ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ পার্ক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। শিশুপার্কটিতে ১২টি রাইড রয়েছে। যেখানে একটি খেলনা ট্রেন, একটি গোলাকার মেরিগো রাউন্ড রাইড ও একাধিক হুইল রাইড রয়েছে। ১৯৯২ সালে এ পার্কে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে সৌজন্য হিসেবে একটি জেট বিমান দেয়া হয়।
রাজধানী ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হওয়ায় ধনী-গরিব প্রতিটি পরিবারের কাছে জনপ্রিয় ছিল। বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার পার্কটি দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চালু ছিল। রোববার ছাড়া শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার ২টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত রাইডগুলো চালু থাকতো। এ শিশুপার্কে প্রতিদিন ছয় হাজারের অধিক মানুষ আসতো। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো আনন্দঘন সময়ে তা কয়েকগুণ বেড়ে যেতো।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় সাভারের একটি গার্মেন্টস কর্মী সাইদুল, তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও শিশু পুত্র সন্তানকে নিয়ে শাহবাগ শিশুপার্কের দক্ষিণ পশ্চিম দিকের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ছোট ভাই ও সন্তানের বায়না মেটাতে গার্মেন্টস থেকে এক দিনের ছুটি নিয়ে গুলশানের বাসা থেকে ছুটে এসেছেন। এসে দেখেন শিশুপার্ক বন্ধ। তাই মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় মনির নামের একজন পিয়ন বলেন, আজ তো রোববার। পার্ক খোলা থাকলেও আপনাকে ঘুরে যেতো হতো।
জনতার আলো/রোববার, ২০ জানুয়ারি ২০১৯/শোভন
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.