admin ২৭ জুলাই ২০২৫ , ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রান্ত পারভেজ : মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রযুক্তির প্রতিটি ধাপে মানুষ পেয়েছে উন্নতির নতুন দিগন্ত। তবে প্রতিটি নতুন প্রযুক্তির সঙ্গেই এসেছে নৈতিকতার নতুন চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সময়ের আলোচিত ও আলোড়িত প্রযুক্তি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এই প্রযুক্তি যেমন বিশ্বকে দ্রুতগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তেমনি এর অপব্যবহার মানুষের জন্য হয়ে উঠছে ভয়ানক এক গলার কাঁটা।

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভুয়া ও অশালীন ভিডিও নতুন করে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মুখাবয়ব জুড়ে দিয়ে বানানো হয়েছে গানের তালে তালে অশালীন নাচের ভিডিও। প্রথমে এসব দেখে অনেকেই অবাক হলেও পরে বুঝে উঠেছেন—এটি মূলত এআই-এর ‘ডিপফেইক’ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির মুখ, কণ্ঠ কিংবা আচরণ নকল করে তৈরি করা হয় বাস্তবসম্মত ভিডিও, যা সত্যি না হয়েও বাস্তব বলে মনে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপফেইক হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকগুলোর একটি। এটি ব্যবহার করে যে কেউ কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তিকে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত দেখাতে পারে। এমনকি সমাজে অস্থিরতা, বিভ্রান্তি ও সুনাম নষ্টের উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই প্রযুক্তি।
আইনি শূন্যতা, প্রযুক্তি দুর্বোধ্যতা
বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এখনও এই ধরনের প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে নেই কোনো কার্যকর আইন। তথ্যপ্রযুক্তি আইন বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলেও ডিপফেইক বা এআই জালিয়াতির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ধারা প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এদিকে সাধারণ মানুষ প্রযুক্তির জটিলতা না বুঝেই এসব ভিডিও বিশ্বাস করে শেয়ার করছে—যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়ানক করে তুলছে।
নিন্দা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা
কেবল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, সরকার প্রধান, জনপ্রিয় অভিনেতা, শিক্ষাবিদ, এমনকি ধর্মীয় আলেমদের নিয়েও বানানো হচ্ছে বিকৃত ভিডিও। সামাজিকভাবে সম্মানিত এসব মানুষ হঠাৎই হয়ে উঠছেন ট্রলের শিকার। পরিবার, বন্ধু ও কর্মক্ষেত্রে মুখ দেখাতে পারছেন না অনেকে। অনেকেই মানসিক চাপ ও হুমকির মুখে আইনি সহায়তা চাচ্ছেন, কিন্তু পরিণতি পাচ্ছেন না।
এর সমাধান কী?
এআই প্রযুক্তিকে বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এই প্রযুক্তি সম্পর্কিত নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়ানো, স্কুল-কলেজে প্রযুক্তি শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা দরকার। সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে—তাদের অ্যালগরিদম আরও উন্নত করে এসব কনটেন্ট দ্রুত শনাক্ত ও মুছে ফেলা উচিত।
প্রযুক্তি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি এর অপব্যবহার এক অভিশাপ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানবিকতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মানুষের হাতে ছুরি তুলে দিতে পারে। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে হয়তো একদিন বুঝে উঠতেই পারব না—কোনটা সত্য আর কোনটা কৃত্রিম!











