admin ৯ আগস্ট ২০২৫ , ২:৪১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা যেন এখন আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একপ্রকার স্থায়ী সালিশি আসরে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আবু কাইয়ুম এর কক্ষজুড়ে চলে অস্থায়ী বিচারিক বৈঠক, যেন থানার ভেতরে আরেকটি আদালত বসেছে, তবে তা আইনি কাঠামোর বাইরে।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য ভুক্তভোগীরা থানায় এলেও, আইনের প্রক্রিয়া শুরু না করে ওসি তদন্ত আবু কাইয়ুম বাদী ও বিবাদী—দুই পক্ষকে নিজের কক্ষে বসিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় সালিশি বৈঠক, যা আইনের ভাষায় সম্পূর্ণ অননুমোদিত ও বেআইনি। এছাড়াও, তদন্ত ওসি যেসব বিষয়ে থানায় বৈঠক বসার কথা নয়, কোর্টে গিয়ে মামলা দায়ের করার কথা সেগুলো নিয়েও বৈঠকে বসেন তিনি।
মামলার বদলে ‘বৈঠক’
একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, থানায় গিয়ে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় মামলা করতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু ওসি তদন্ত মামলা না নিয়ে উল্টো উভয় পক্ষকে ডাকেন একই টেবিলে। সেখানে কখনও একপক্ষকে হেনস্তা, কখনও হুমকি দিয়ে, আবার কখনও প্রভাব খাটিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে সমাধান চাপিয়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি বিষয়ে প্রথমে অভিযোগ করি, পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এলাকায় যাচাই করে যায়, সেই বিষয়ে আমি মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মামলা না নিয়ে আমাকে ও আমার প্রতিপক্ষকে বসিয়ে বলে দেন—‘এভাবে চলবে না, এখনই মীমাংসা করতে হবে।’ পরে দেখি, যাদের বিরুদ্ধে মামলা করব, তাদের পক্ষেই সব সিদ্ধান্ত যাচ্ছে। আবার আমি ভুক্তভোগী হয়ে আমার কথা ওসিকে জানাতে চাইলে উল্টো থানা থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার হুমকি দেন তিনি।
থানার ভেতরে বেআইনি প্রক্রিয়া
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, থানা হলো অপরাধ নথিভুক্ত ও তদন্ত পরিচালনার সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে সালিশি বৈঠক বসানো, মামলার পরিবর্তে সমঝোতা চাপিয়ে দেওয়া—এটি আইনের পরিপন্থী। এতে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন এবং প্রভাবশালীরা ফায়দা লুটে নেন।
প্রভাব খাটিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ
স্থানীয়দের দাবি, ওসি তদন্তের এই সালিশি কার্যক্রমে প্রায়ই প্রভাবশালী ও আর্থিকভাবে সক্ষম পক্ষ সুবিধা পেয়ে থাকে।
গভীর রাত পর্যন্ত ‘অফিস কোর্ট’
এভাবেই সকাল থেকে রাত অবধি থানায় চলে এই ‘অফিস কোর্ট’। মামলার কাগজপত্র জমা হলেও তা নথিভুক্ত না করে পক্ষগুলিকে দীর্ঘ আলোচনায় বসিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন ওসি তদন্ত। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এতে তারা একদিকে ন্যায়বিচার হারাচ্ছেন, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের প্রভাব ও পুলিশের চাপ একসঙ্গে সহ্য করতে হচ্ছে।
আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে
এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুলিশের নিরপেক্ষতা ও আইনপ্রয়োগের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যদি থানা আদালতের মতো আচরণ শুরু করে, তাহলে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ধ্বংস হবে এবং অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হবে।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে পল্লবী জোনের দায়িত্বে থাকা এডিসি জাকারিয়ার সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে, মিরপুর জোনের দায়িত্বে থাকা উপ-পুলিশ কমিশনারের ফোনে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেন না।
পল্লবী থানা ও তদন্ত ওসির আরোও বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে শীঘ্রই (দ্বিতীয় পর্ব) আসছে….

















