admin ৫ অক্টোবর ২০২৫ , ১০:১০ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
মো. রুবেল তালুকদার : আমরা প্রতিদিন যে কিবোর্ড ব্যবহার করি, সেটা ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কিংবা মোবাইল, খেয়াল করলে দেখা যায়, বর্ণগুলো বইয়ের মতো ধারাবাহিকভাবে সাজানো নয়। অর্থাৎ ‘A, B, C, D’ পরপর নেই, বরং এলোমেলোভাবে বসানো। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এর পেছনে কারণ কী?

আসলে এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৮৭০-এর দশকে মার্কিন উদ্ভাবক ক্রিস্টোফার ল্যাথাম শোলস প্রথম বাণিজ্যিক টাইপরাইটার তৈরি করেন। প্রাথমিকভাবে সেই টাইপরাইটারের কিবোর্ডে অক্ষরগুলো A থেকে Z পর্যন্ত ক্রমানুসারে সাজানো ছিল। কিন্তু দেখা গেল, দ্রুত টাইপ করার সময় যন্ত্রের টাইপবারগুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আটকে যাচ্ছিল। ফলে লেখা ধীরগতির হয়ে যেত এবং মেশিন প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ত।
এই জটিলতা দূর করার জন্য শোলস অক্ষরগুলোর বিন্যাস পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঘন ঘন ব্যবহৃত অক্ষরগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখেন, যাতে টাইপবারের সংঘর্ষের ঝুঁকি কমে। এভাবেই জন্ম নেয় আজকের পরিচিত QWERTY লেআউট, যার নামকরণ হয়েছে কিবোর্ডের উপরের সারির প্রথম ছয়টি অক্ষর— Q, W, E, R, T, Y— থেকে।
এরপর QWERTY লেআউট দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং টাইপরাইটারের মানদণ্ডে পরিণত হয়। পরবর্তীতে যখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনে ডিজিটাল কিবোর্ড যুক্ত হলো, তখনও সেই একই বিন্যাস বজায় রাখা হয় — মূলত পুরনো অভ্যাস এবং ব্যবহারকারীদের পরিচিতির কারণে।
তবে এটাই একমাত্র লেআউট নয়। আরও কয়েকটি বিকল্প বিন্যাস তৈরি হয়েছে, যেমন DVORAK ও AZERTY কিবোর্ড, যা টাইপিং আরও দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্য করতে সক্ষম। তবুও মানুষ নতুন প্যাটার্নে অভ্যস্ত হতে আগ্রহী না হওয়ায়, QWERTY আজও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও স্বীকৃত লেআউট হিসেবে টিকে আছে।
অর্থাৎ, কী-বোর্ডের এই এলোমেলো বিন্যাস কোনো ভুল নয় — বরং একসময়ের যান্ত্রিক সমস্যার বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান, যা প্রযুক্তির ইতিহাসে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।

















