জাতীয়

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ড: নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা?

  admin ১৯ অক্টোবর ২০২৫ , ৬:১১ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

প্রান্ত পারভেজ : দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে তীব্র উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকার মিরপুরের একটি গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, চট্টগ্রামের ইপিজেডের একটি কারখানা এবং সর্বশেষ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো কেইপিআই ভুক্ত স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট মহল এই ধারাবাহিক ঘটনাকে কেবল নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখতে নারাজ, বরং এর পেছনে বড় কোনো শক্তি বা গভীর ষড়যন্ত্রের হাত রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও জোরেশোরে উঠেছে।

ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের চিত্র:

মিরপুর ট্র্যাজেডি: প্রথমে ঢাকার মিরপুর শিয়ালবাড়ি এলাকায় একটি পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ আগুন লাগে। এই ঘটনায় অন্তত ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। রাসায়নিক গুদামের উপস্থিতির কারণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসকে দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়।

চট্টগ্রাম ইপিজেড: এর পরপরই চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার একটি তোয়ালে কারখানায় আগুন লাগে, যা একটি সাততলা ভবনকে ভস্মীভূত করে দেয়। তবে শ্রমিকরা দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারায় সেখানে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ব্যাপক।

শাহজালাল বিমানবন্দর: সবশেষ গত শনিবার দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে আমদানিকৃত পণ্য রাখার বড় একটি অংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নিরাপত্তার দিক থেকে স্পর্শকাতর এমন একটি স্থানে বারবার আগুনের ঘটনা পুরো দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিমানবন্দরটির ফ্লাইট ওঠানামাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়।

ছোটখাটো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে আগুন

এ সকল বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের মেঘনা গ্রুপের চিনির কারখানায় ভয়াবহ আগুন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন। দেশকে অস্থিতিশীল করতেই একটি মহল এ সকল কর্মকাণ্ড এবং নাশকতার করছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

বিশ্লেষকদের উদ্বেগ ও নাশকতার শঙ্কা:

​ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দর বা ইপিজেডের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে উন্নত ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম থাকার কথা। এমন স্থানে ঘন ঘন আগুন লাগা কেবল দুর্ঘটনার লক্ষণ নয়। তারা দুর্ঘটনা ও পরিকল্পিত নাশকতা উভয় সম্ভাবনাকেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের কথা বলেছেন। রাজনৈতিক মহল থেকেও এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডকে ‘নাশকতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে ফেলার চেষ্টার অংশ কিনা, সেই সন্দেহও প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকারের হুঁশিয়ারি:

​দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এসব ঘটনায় যদি নাশকতা বা পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের উদ্বেগ নিরসনে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা ‘গভীরভাবে তদন্ত’ করছে বলেও জানানো হয়েছে।

প্রশ্নবিদ্ধ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা:

​ধারাবাহিক এসব অগ্নিকাণ্ড দেশের সামগ্রিক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও স্পষ্ট করে তুলেছে। অনেক স্থাপনায় জরুরি সিঁড়ি ও নির্গমণ পথের ঘাটতি, দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণে অনিয়ম এবং বৈদ্যুতিক অব্যবস্থাপনা আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা কেবল দুর্ঘটনার পর প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, পরিকল্পিতভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

​এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের পেছনের রহস্য উন্মোচন এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় রোধ করাই এখন সময়ের দাবি।

আরও খবর:

Sponsered content