admin ২৯ অক্টোবর ২০২৫ , ১:২৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রান্ত পারভেজ : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এবং বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার আজ বুধবার কক্সবাজারে ব্র্যাক কর্তৃক বাস্তবায়িত ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত ‘PLEASE’ (Plastic Waste Recycling for Livelihood, Environment and Sustainability Enhancement) প্রকল্প পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী ও গবেষক ড. সাইমুম পারভেজ।

পরিদর্শন শেষে ড. হায়দার প্রকল্পটির উদ্ভাবনী ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এটি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে টেকসই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রূপান্তরের একটি কার্যকর মডেল। তিনি এই মডেলকে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার ইঙ্গিত দেন এবং বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশব্যাপী টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপনের অঙ্গীকার করেন।

পরিবেশ সুরক্ষায় ‘পলেজ’ প্রকল্পের ভূমিকা
পলেজ প্রকল্পটি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রকল্পটি নাগরিকদের বর্জ্য পৃথকীকরণে উৎসাহিত করে, সংগ্রহ ও নিরাপদ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করে, এবং সংগৃহীত প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে জলবায়ু সহনশীল ও মানসম্মত আসবাবপত্র তৈরি করছে।
ড. হায়দার উল্লেখ করেন, সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের সবুজ অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তিনি বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় অদৃশ্য—রাস্তা, নদী ও খালের পাশে অগণিত বর্জ্য ফেলায় পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, রোগবালাই ছড়াচ্ছে, আর অর্থনীতি হারাচ্ছে তার উৎপাদনশীল শক্তি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এই অচলাবস্থা ভেঙে দেবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা হবে।
বিএনপি’র ‘রাষ্ট্র মেরামতের এজেন্ডা’ ও কর্মসংস্থান
ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, বিএনপি তার ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের এজেন্ডাতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই এজেন্ডার মূল প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে—দেশব্যাপী বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, নিরাপদ নিষ্পত্তি ও পুনর্ব্যবহারের একটি সমন্বিত জাতীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি প্রকল্পের কর্মরত নারী ও তরুণ কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন এবং তাদের উদ্যমের প্রশংসা করে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ বিশেষত নারী ও তরুণেরা বিকল্প আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। একদিকে পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান—এটাই টেকসই উন্নয়নের প্রকৃত রূপ।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, কক্সবাজারের এই মডেলটি যদি প্রমাণিতভাবে কার্যকর ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হয়, তবে এটি দেশব্যাপী সম্প্রসারণ বা পুনরাবৃত্তির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে এবং এটি শহর ও গ্রামীণ এলাকায় টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।

‘গ্রিন বাংলাদেশ’ গড়ার জাতীয় অঙ্গীকার
ড. হায়দার জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে প্রতিটি পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যেখানে স্থানীয় সরকার, বেসরকারি খাত ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি বলেন, এভাবেই আমরা একটি ‘গ্রীন বাংলাদেশ’ গড়ে তুলব—যেখানে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক হবে।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের এজেন্ডা শুধু রাজনৈতিক সংস্কার নয়, এটি একটি সমন্বিত জাতীয় পুনর্জাগরণের রূপরেখা। এই পরিদর্শন তারই অংশ—সফল মডেলগুলো পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পরিশেষে, ড. হায়দার আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রযুক্তি, স্থানীয় উদ্ভাবন ও জনগণের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ একদিন পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

















