admin ২৯ অক্টোবর ২০২৫ , ১০:০১ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রান্ত পারভেজ : দেশের যেকোনো স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে অপরিহার্যভাবে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে পাইলিংয়ের কাজ করতে হয়। কিন্তু এই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত শ্রমিকদের একটি বড় অংশ কোনো প্রকার সেফটি পোশাক বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করছেন। ন্যূনতম নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়া নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণে নির্মাণস্থলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, আর প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য শ্রমিক।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনগুলোর পাইলিং শ্রমিকরা হেলমেট, সেফটি বেল্ট, গ্লাভস বা বুট পরিধান করছেন না। গভীর গর্তে নেমে মাটি কাটা বা রডের কাজ করার সময়ও তাদের শরীরে দেখা যায় না কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইলিংয়ের কাজ inherently ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে মাটি ধসে পড়া, উপর থেকে বস্তু পড়ে যাওয়া, রড বা যন্ত্রাংশের আঘাতে আহত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম যেমন: সেফটি হেলমেট, সেফটি গগলস, সেফটি বুট, সেফটি হারনেস/বেল্ট, এবং গ্লাভস ব্যবহার করলে এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই এড়ানো সম্ভব।
সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় পাইলিংয়ের সময় মাটির নিচে চাপা পড়ে, ভারী রড বা পাইপের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক শ্রমিক। এসব দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবন মালিকদের জরিমানা করলেও মূল সমস্যা রয়ে গেছে অমীমাংসিত—সেফটি মানার কোনো বাধ্যতামূলক বাস্তব প্রয়োগ নেই।
নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের একজন নেতা জানান, “আমরা চাই আইনের প্রয়োগ হোক। যারা শ্রমিকদের সেফটি গিয়ার ছাড়া কাজ করায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এতে যেমন শ্রমিকের জীবন রক্ষা পাবে, তেমনি ভবনের মালিকরাও আইনি ঝামেলা থেকে বাঁচবেন।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য মানসম্মত নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা এবং বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পোশাক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা মালিকপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারি এবং কঠোর শাস্তির বিধান কার্যকর না হওয়ায় মালিক ও ঠিকাদার উভয় পক্ষই শ্রমিকদের জীবন নিয়ে উদাসীন।
নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কাজ করার কারণে যখনই কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটে, তখন প্রাণহানি বা গুরুতর জখমের শিকার হন শ্রমিকরা। আর এর ফলস্বরূপ, প্রায়শই দুর্ঘটনার কারণে আইনি জটিলতা ও জরিমানার শিকার হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালারা। বাড়ি তৈরির অনুমোদনে সেফটি নিশ্চিত করার শর্ত থাকলেও, কাজের সময় তার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, বহুতল ভবনের পাইলিং এবং অন্যান্য নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের জন্য অবিলম্বে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা অনুযায়ী মালিকপক্ষকে সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহে বাধ্য করতে হবে এবং এর ব্যত্যয়ে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আইনি প্রয়োগ ও নিয়মিত তদারকি থাকলে নির্মাণস্থলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে এবং বাঁচবে বহু শ্রমিকের মূল্যবান প্রাণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়ে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ।

















