আইন-আদালত

পল্লবীতে মাদক ও গ্যাং সংস্কৃতির ছড়াছড়ি, তবু বহাল তবিয়তে ওসি তদন্ত (পর্ব -২)

  admin ২ নভেম্বর ২০২৫ , ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

প্রান্ত পারভেজ  : রাজধানী ঢাকার পল্লবী থানা এলাকা যেন অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা, এবং কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া দাপটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কতিপয় নেতার সক্রিয়তা বন্ধে এবং সামগ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পল্লবী থানা পুলিশ একেবারেই ব্যর্থ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনারও কুল-কিনারা করতে পারেনি থানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বরং পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রমে পক্ষপাতিত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার কেন্দ্রে রয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আবু কাইয়ুম ও এসআই হাসান। এর আগেও এই হাসানের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন বিভিন্ন ভুক্তভোগী।

অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে তদন্ত ওসি: বিচার নয়, যেন ‘রায়দান’

​এলাকাবাসীর অভিযোগ, যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে মামলা নথিভুক্ত করাতো দূরের কথা, থানার তদন্ত ওসি উল্টো দুই পক্ষকে ডেকে এনে আদালতের মতো ‘বিচারিক কার্যক্রম’ চালিয়ে সমঝোতা করতে ব্যস্ত থাকেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন এসআই হাসান। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত পক্ষকে বিচারের মাধ্যমে জিতিয়ে দেওয়ার কৌশল তার ভালোই জানা। এমনকি, তার দেওয়া ‘বিচার’ না মানলে অপরপক্ষকে থানা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও তিনি নিয়মিত দেন বলে জানা যায়।

গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে তার ক্ষিপ্ত আচরণ

গত দুদিন আগে একটি অভিযানে যায় পল্লবী থানার সেই তদন্ত ওসি, তবে সেই অভিযানের ভিডিও ধারণ করতে গেলে গণমাধ্যম কর্মীর মোবাইল ছিনিয়ে নেয়, এবং উল্টো হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়াও, গত কয়েকদিন আগে একটি সুনামধন্য অনলাইন নিউজ তাকে মাদকের বিষয়ে প্রশ্ন করলে, জবাবে তিনি এ ধরনের প্রশ্ন না করার জন্য বলেন। এসকল ঘটনা থেকে বুঝা যায় গণমাধ্যম কর্মীদের এক ধরনের শত্রুই মনে করেন তিনি। যারা সমাজের দুর্নীতি আর অনিয়ম তুলে ধরতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তাদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার দেখে অনেকটাই হতভম্ব গণমাধ্যম কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। গণমাধ্যম কর্মীরা তার চোখে এমন বিষ কেন এ বিষয়ে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

বদলি হয়েছেন ওসি-এসআই, বহাল তদন্ত ওসি

​সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিউল এবং সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মোহাম্মদ আলী এর ঘুষের দরকষাকষির একটি অডিও ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ওসি ও এসআইকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পল্লবী থানার বিতর্কিত তদন্ত ওসি আবু কাইয়ুম এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

​৫ আগস্টের ঘটনার পর পল্লবীবাসী পুলিশের যে ইতিবাচক আচরণ প্রত্যাশা করেছিল, বর্তমান তদন্ত ওসির কার্যক্রমে তার প্রতিফলন দেখছেন না সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন, “আসলে তার খুঁটির জোর কোথায়?”

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধীদের দাপট

​অনুসন্ধানে জানা যায়, পল্লবী এলাকায় মাদক কারবারী ও কিশোর গ্যাংগুলোর বড় অংশের পিছনে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ‘বড় ভাই’ এবং রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাদের ছত্রছায়া। রাজনৈতিক প্রভার আর প্রভাবশালী নেতাদের ক্ষমতা খাটিয়ে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটলেও, অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আবার পল্লবী এলাকার বিভিন্ন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের একটি অংশ অর্থ ব্যয় করছে সন্ত্রাসীদের পেছনে। এসব জেনেও যেন না জানার ভান করে বসে আছে পল্লবী থানা পুলিশ। আবার এ সকল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের সাথে সখ্যতা করে সোর্স হয়ে কাজ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে, থানায় কেউ কথা বললে নাকি উল্টো অজুহাত দেখায় তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের এখনই গ্রেফতার করতে না পারলে ধীরে ধীরে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে তারা। সঙ্গবদ্ধ হয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটাবে পল্লবীর বিভিন্ন এলাকায়।

পল্লবীর নতুন আতঙ্ক ছাত্রলীগের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি

আবার নতুন করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের তিন নং ওয়ার্ডের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান পারভেজ গত একমাস ধরে জামিনে এসে এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন মানুষকে হুমকি এবং নতুন করে আবারো মিরপুরে পুনর্গঠিত হবে আওয়ামী লীগ এমন কোথাও হুংকার দিয়ে জানাচ্ছেন তিনি। এই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ওয়ার্ড সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজের বিষয়ে এলাকাবাসী গোয়েন্দা নজরদারির দাবি জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পল্লবী এবং মিরপুর থানায় একাধিক ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা, ধর্ষণ আর চাঁদাবাজি মামলা রয়েছে। এছাড়াও সাধারন মানুষ বলছেন, এই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতিকে দ্রুত গ্রেফতার করতে না পারলে নতুন করে আওয়ামী লীগ ও তরঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠিত হতে পারে।

কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনায় পল্লবীবাসী

​পল্লবী থানা এলাকায় মাদক, সন্ত্রাস এবং আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাকর্মীদের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সাধারণ মানুষ এখন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। তাদের দাবি, বিতর্কিত তদন্ত ওসিসহ সকল অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি, এবং এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শক্তিশালী ও জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করা হোক এমন প্রত্যাশা সকলের।

পল্লবী থানা ও তদন্ত ওসির আরোও বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে শীঘ্রই (পর্ব – ৩) আসছে….

আরও খবর:

Sponsered content